বাংলা বর্ষ মুলত একটা ফসলি সন যা মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে শুরু হয়। বলতে পারেন তখন কি কোন সাল ছিল না? ছিল, মোঘলরা হিজরী সন অনুযায়ী রাজ কার্য সম্পাদন করতেন। কিন্তু বাংলা অঞ্চলটায় ফসল বুনন এবং ফসল কাটা বা নতুন ফসল ঘরে তোলার বা নবান্নের সময় গোনাটা জুরুরী ছিল রাজাদের খাজনা আদায়য়ের সাথে সম্পর্কিত। যদিও কৃষকেরা তখনো ফসল বোনা এবং ফসল কাটা তখনো চাঁদের অবস্থান বা আমাবস্যা-পুর্ণিমার হিসেবেই করছিলো কিন্ত হিসাবটার কোন দাপ্তরিক নাম বা রূপ ছিলনা যা চাষিরা ছাড়া অন্যরা হিসেব কষতে পারতেন। আর হিজরী বর্ষ হিসেবে যখন খাজনা আদায়ের সময় হতো তখন চাষিরা থাকতো মাঠে ব্যস্ত ফসলের পরিচর্যায়, সেই ফসল ঘরে না উঠা পযন্ত খাজনা আর আদায় হতো না ঠিক মতো। তাই খাজনা আদায় আর ফসল বোনা, ফসল কাটা সব হিসেবের একটা দাপ্তরিক রূপ দেন সম্রাট আকবর এই বাংলা বর্ষের সৃষ্টির মাধ্যমে। শুরুতে এটা ফসলী সন হিসেবে গননা হলেও পরবর্তীতে এটি বাংলা সন হিসাবে রূপলাভ করে। বস্তুত ১৫৫৬ সনে সম্রাট আকবরের সিংহাসনের আরোহনের দিন থেকে গুণা শুরু হয় এই বাংলা সন। নবান্নের সময়ে চাষিদের ঘরে থাকতো নতুন ফসলের ঘ্রাণ আর মনে থাকতো আনন্দ, আর নবান্নকে ঘিরেই আয়োজিত হতো নানান পিঠাপুলির আয়োজন আর নানান উৎসব।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বিষয়টা কিভাবে শুরু হয়েছিল সেটা জানার অনেকের কৌতূহল আছে। যদিও অনেক অনেকবার আলোচিত হওয়া এসব বিষয় অনেকটা চর্বিত চর্বনের পর্যায়ে চলে গেছে। আধুনিক কালে যখন হাতে হাতে মুঠোফোনের কল্যানে মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে সেখানে এটা জানা খুব সহজ একটা ব্যপার। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে একটা ন্যারেটিভ বা ভ্রান্ত ধারনার প্রচারের মাধ্যমে সাধারন মানুষকে বোকা বানানো বা ধোকা দেওয়ার চেষ্টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্টিটিউট থেকে শুরু হওয়া সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটা ধীরে ধীরে সেই ভ্রান্ত ধারনা আবর্তে পরে হয়ে যায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুরুতেই আমরা নবান্ন্রে উৎসবের কথা বলেছি যেটা বাংলাদেশের আপামর জনগন তাদের প্রত্যেকের শৈশব কথায় ফিরে গেলে স্পষ্ট দেখতে পাবে নবান্নের সময়ে পিঠাপুলির উৎসবটা পালনের বিষয় ছিলো নাকি মঙ্গলের আশায় একটা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করার আগ্রহটা প্রধান ছিল। ছোটবেলা থেকেই বৈশাখ এলে আমরা চট্রগ্রামের অধিবাসি শিুশুরা মা বাবার কাছে আবদারে পাগল থাকতাম গ্রামের নানান প্রান্তে অনুষ্টিত ’বলি খেলায়’(বৈশাখি মেলা) যাওযার বায়নায়। আর চট্টগ্রামের বিখ্যাত লাল দিঘীর পাড়ের ’জব্বর বলি খেলা’র ইতিহাস তো সারা বাংলাদেশের মানুষই জানেন এখন। এখানে প্রত্যেকটা অনুসঙ্গই আনন্দ উদযাপনের কোন মঙ্গল পাওয়ার আশার না। সুতরাং বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষ যেটা বিশ্বাস করেনা এমন একটা কর্মকাণ্ড তাদের জোর করে চাপিয়ে দেয়া শোভাযাত্রায় মঙ্গল খুঁজতে যাওয়াও একটা ফ্যাসিবাদ বয়ানের অংশ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট সেটাই আমাদের সামনে পরিস্কার করে দেয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে এই শোভাযাত্রার নতুন নামকরণ ’বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ যথার্থ। শুভ কামনা জানাই এই উদ্যোগকে এবং প্রত্যাশা করছি সাধারনের অংশগ্রহণে এই শোভাযাত্রা অনেক অনেক আনন্দময় হয়ে উঠবে।