সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও।
কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতৃত্বদাতা, আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার তসলীমুল হক ফরাজী লেডু পেলো ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ এর ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন এর হাত থেকে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন তসলীমুল হক ফরাজী লেডু।
আর্থিক সহায়তার চেক গ্রহণের সময় লেডুর পিছনে তার ছোট ভাই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা জাহেদুল হককেও (মাথায় কালো ক্যাপ পরিহিত) দাঁড়ানো দেখা গেছে। এই ছবি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়াতে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তসলীমুল হক ফরাজী লেডু জালালাবাদ ইউনিয়নের ফরাজী পাড়ার বাসিন্দা ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার মোজাম্মেল হক ফরাজীর ছেলে। সে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম শাহজাহান চৌধুরী লুতু মিয়ার ছেলে শিবির নেতা শহীদ জয়নাল আবেদীন চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঈদগাঁও ফরিদ আহমদ কলেজের মাঠে নৃশংসভাবে জয়নালের হাত কেটে উল্লাস কারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগের ক্যাডার তসলীমুল হক ফরাজী লেডু।
পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যখন ঈদগাঁওতে তুমুল আন্দোলন চলছিল তখন (৪ আগস্ট) ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগেরে নেতৃত্বে সশস্ত্র মিছিলের অগ্রভাগে ছিল তসলীমুল হক ফরাজী লেডু। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উপর হামলার ঘটনাও ঘটায় সে।
চিহ্নিত একজন অপরাধী ও হত্যা মামলার আসামিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদানের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঈদগাঁও উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সলিম উল্লাহ জিহাদী। তিনি দ্রুত সময়ে বিষয়টি তদন্তের দাবি তুলেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, তসলীমুল হক ফরাজী লেডুর ছোট ভাই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা জাহেদুল হক সুকৌশলে এ কাজটি সেরেছে। সমন্বয়ক নামধারী কিছু ধান্দাবাজকে এতে ব্যবহার করেছে। জাহেদুল হক ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা পলাতক ফারুক মৌলভীর ভগ্নিপতি। এমন ঘটনাকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি মন্তব্য করেছেন ছাত্রজনতা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. রবিউল হোসেন বলেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আহতদের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব ছিল একটি টিমের। তসলীমুল হক ফরাজী লেডু নামক ব্যক্তি ওই তালিকায় কিভাবে স্থান পেলো, খোঁজখবর নিচ্ছি।
জুলাই আন্দোলনের আরেক সম্মুখ যোদ্ধা আহসানুল জুবাইর বলেন, তসলীমুল হক ফরাজী লেডু নামক ব্যক্তি ৪ আগস্ট ঈদগাঁও স্টেশনে আন্দোলনে বাধা দিতে গেলে আমরা ছাত্রজনতা তাকে প্রতিহত করি। সে চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং খুনের মামলার আসামি। এমন একজন ব্যক্তি আন্দোলনের পক্ষে আহত হয়েছে বলে কেমনে অনুদান গ্রহণ করে? এটি আমাদের পুরো আন্দোলন এবং শহীদদের সাথে প্রতারণা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাধাদানকারী হিসেবে তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিক্রিয়া জানতে তসলীমুল হক ফরাজী লেডুর সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।