বছর চারেক আগে চট্টগ্রামে এক বিকাশ এজেন্ট খুনের ঘটনায় এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
সোমবার(২৪ ফেব্রুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরা।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম আব্দুর রহমান। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বলেন, “হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩০২ ধারায় আসামি আব্দুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
“পাশাপাশি হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো তিন মাসের সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত।”
এই মামলার আরেক আসামি নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, খুন হওয়া বিজয় কুমার বিশ্বাস (৩২) কুমিল্লার চান্দিনা থানার সাওরাতলী গ্রামের মৃত সন্তোষ কুমার বিশ্বাসের ছেলে। বিজয় নগরীর ইপিজেড থানার নেভি হাসপাতাল গেইট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ইপিজেড থানার নেভি গেইট ওয়েল ফেয়ার মার্কেটের নিচতলায় চাঁদনী এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড গিফট শপ নামের একটি দোকান ছিল বিকাশ এজেন্ট বিজয় কুমার বিশ্বাসের।
২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর বিকালে নগরীর পাহাড়তলি থানার অলঙ্কার মোড় সংলগ্ন আলিফ গলি এলাকা থেকে ককশিট ও পেপার দিয়ে মোড়ানো বিজয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই ঘটনার এক সপ্তাহ বাদে ইপিজেড থানার সেলার্স কলোনি ২ নম্বর গেট সংলগ্ন রংধনু স্কুল গলির বাসা থেকে আব্দুর রহমানকে (৪৪) গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আব্দুর রহমান তখন ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ইপিজেড থানার নেভি ওয়েল ফেয়ার মার্কেটে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়।
তদন্তকারী সিআইডি কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন, একই মার্কেটে দোকান হওয়ায় আব্দুর রহমান ও বিজয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এজন্য প্রতিমাসে সাত হাজার টাকা লাভে দেড় লাখ টাকা আব্দুর রহমানকে ঋণ হিসেবে দিয়েছিল বিজয়।
কিন্তু আব্দুর রহমান টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দুজনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল।
২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর আব্দুর রহমান টাকা পরিশোধের কথা বলে বিজয়কে তার প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেয়। সেখানে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আব্দুর রহমান ধাক্কা দিলে বিজয় মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। তখন গলায় ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে বিজয়কে হত্যা করা হয়।
পরদিন সকালে বিজয়ের লাশ বস্তার ভেতরে করে ককশিট ও পেপার মুড়িয়ে অলঙ্কার মোড় সংলগ্ন আলিফ গলিতে ফেলে দিয়ে আসে আব্দুর রহমান ও তার কর্মচারী নাছির উদ্দিন।
লাশ উদ্ধারের পর বিজয়ের ভাই সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস বাদি হয়ে নগরীর পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগ পত্র দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার রায় দেওয়া হল।