কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা না বলেই উপ-পুলিশ কমিশনার লিয়াকত আলী খান নামে এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষ এক আইনজীবী নিহত হওয়ার বিষয়ে রয়টার্স বা কোনো সাংবাদিক উপ–পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে কথা বলেননি। লিয়াকত নামে চট্টগ্রামে চার জন কনস্টেবল আছেন। তারাও কাউকে কোনো বক্তব্য দেননি। মনগড়া বক্তব্যকে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য বলে চালিয়ে দিয়েছে রয়টার্স।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতার ও জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ ও তার আশেপাশের উদ্ভুত পরিস্থিতির উপর বিদেশি সংবাদমাধ্যম রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর এক বিবৃতি দেয় হয়।
সিএমপির বিবৃতিতে বলা হয় চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানার মামলা নং- ৫২, এজাহারনামীয় ১নং আসামি সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতার ও জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশেপাশের উদ্ভুত পরিস্থিতির উপর বিদেশি সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রয়টার্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় “One Killed in Bangladesh as Hindu protesters clash with police। শিরোনামে একটি রিপোর্ট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের নজরে এসেছে। রিপোর্টটি পরবর্তীতে ভয়েস অব আমেরিকাসহ আরও অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার লিয়াকত আলী খানকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, A Muslim lawyer defending Das was killed amid protests outside the court [in Chittagong,” said police officer Liaquat Ali। মানে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেছেন, চট্টগ্রামে আদালতের বাইরে বিক্ষোভের মধ্যে দাসের পক্ষে একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হয়েছেন।
সিএসপির বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রয়টার্স বা কোনো সাংবাদিক এ বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খানের সাথে কথা বলেননি।
ঘটনার সময়ে লিয়াকত আলী খান আদালত প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে দায়িত্বরত ছিলেন। লিয়াকত নামে চট্টগ্রামে চার জন কনস্টেবল আছেন। তারাও কাউকে কোনো বক্তব্য দেননি। কারও বক্তব্য গ্রহণ না করেই নিজেদের মনগড়া বক্তব্যকে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য বলে চালিয়ে দেয়া সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভবিষ্যতে রয়টার্সসহ সব গণমাধ্যম এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত হন একদল দুষ্কৃতকারীর হাতে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সাইফুলকে সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে রয়টার্স তাদের প্রতিবেদন থেকে সেই অংশটি মুছে ফেলে এবং প্রতিবেদনের নিচের অংশে এ বিষয়টি উল্লেখ করে। রয়টার্স প্রকাশিত সংবাদের চতুর্থ প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেছেন, আদালতের বাইরে (চট্টগ্রামে) বিক্ষোভের মধ্যে (চিন্ময়) দাসের পক্ষের একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হয়েছেন। এ প্যারাটি মুছে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ করে রয়টার্স তাদের নোটে বলেছে, ‘এ প্রতিবেদনের চতুর্থ অনুচ্ছেদ (প্যারা) থেকে পুলিশ কর্মকর্তার সেই মন্তব্য মুছে ফেলা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, নিহত আইনজীবী (চিন্ময়) দাসের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন।
সংশোধিত প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে এক (হিন্দু) ধর্মীয় নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় অন্তত একজন নিহত হন। এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিন্দু (সাবেক) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত সোমবার ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতারের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে তার সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন।
আইনজীবী নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বন্দর নগরীতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে একটি বড় ধরনের জনসমাবেশে নেতৃত্ব দেন চিন্ময়। এরপর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হলে জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়। শুরু হয় সংঘর্ষ।