ভোরের আলো ফোটার আগেই রুপালি ইলিশ, লাক্ষ্যা,কই কোরাল, দাতিনা কোরাল, রেড স্নাপার, ভেটকি, সুরমা, কাটল ফিশ, দেশি স্কুইড, রূপচাঁদা, ম্যাকারে, শ্রিম্প, টুনা, স্যামন, ম্যাকরেল, সারডিন, স্কুইড, লবস্টার, টুনা কড, ছুরি, পোপা, ফাইস্যা, লইট্যা, ইছা চোক্ষা, চাপা, চাপিলা, রিকসা মাছ ইত্যাদি মাছ বোঝাই ট্রলার ফিশারী ঘাটে এসেভিড়েছে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই চট্টগ্রাম ফিশারী ঘাটে শুরু হয়ে যায় বিশাল কর্মযজ্ঞ। সমুদ্র ফেরত জেলেদের হাঁক-ডাক। হাতে হাতে নানা মাছ বোঝাই খাঁচা। সেই সাথে বাড়ে মাছ ব্যবসায়ীদের জটলা। শুরু হয় কেনাবেচার ধুম।
ফিশারীঘাট থেকে মাছ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী বিদেশে রপ্তানিও করেন। ক্রেতাদের হাতে সমুদ্রের তাজা মাছ তুলে দিতে এখান থেকে মাছ সংগ্রহ করেন নগরীর মাছ বাজারের খুচরা বিক্রেতারা। এখানকার চারটি ঘাটে দৈনিক কোটি টাকার বিকিকিনি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন সামুদ্রিক মাছের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে। সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। দীর্ঘসময় ঘাটে ঘোরাঘুরি করেও কখনো কখনো ক্রেতাকে মাছ কিনতে হয় দ্বিগুণ দামে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের লুসাই কন্যা খ্যাত কর্ণফুলী নদীর সবচেয়ে বড় ঘাট চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট। প্রথম পর্তুগিজরা বসিয়েছিল আড়ত। কালে কালে বাজারও হয়েছে। জেটি হয়েছে চারটি। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফিশারি ঘাট এর অবস্থান দুইটি জায়গাতে রয়েছে। পাথরঘাটার ইকবাল রোডের ফিশারি ঘাটের অবস্থান পরিবর্তিত হয়ে এখন নতুন করে এবং আরও বড় পরিসরে ফিশারি ঘাটটি বানানো হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তীরে রাজাখালীর মুখে লুসাই কন্যাতে। গভীর সমুদ্র থেকে জেলেরা মাছ শিকার করে নিয়ে আসেন এই ফিশারি ঘাটে। চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গীবাজারের কাছে সামুদ্রিক মাছের বিরাট বাজার এই ফিশারি ঘাট। প্রতি রাতে ৩টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মৌসুমভেদে বিভিন্ন ধরনের মাছের কেনাবেচা চলে। এই ঘাটে মূলত দেশের প্রতিটি জেলা থেকেই মাছ আসে, যা পরবর্তীতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যায়। আর তাই মাছের আড়তদারদের ভিড়ে রীতিমত সরগরম থাকে চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট। চলে কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা।
এই বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বরফকল ও কোল্ড স্টোরেজ। খাবারের হোটেলও আছে কয়েকটি। প্রায় অর্ধলাখ মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে বাজারের সঙ্গে। এই ঘাটে মোট চারটি জেটি রয়েছে। এর মধ্যে একটি পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। বাকি তিনটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) লিজ দিয়েছে। মাছ আনা নেয়ার এই ট্রলারগুলোকে প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা এবং বিক্রি হওয়া মাছের ২ শতাংশ দিতে হয় চউককে।