জসিম উদ্দিন মনছুরি
বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য বেশ কিছু কালো আইন প্রণয়ণ করে। নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য দুর্বিসন্ধিমূলকভাবে আইনগুলো প্রণয়ণ করা হয়। জনগণ যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে কিংবা দুর্নীতি, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে না পারে সেজন্য কালো আইনগুলো প্রণয়ণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জননিরপত্তা আইন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সুরক্ষা আইন, সাইবার সিকিরিউটি আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন উল্লেখযোগ্য। সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার নিজেদের রক্ষা করতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে নিজেদের মনগড়া সংবিধান রচনা করে। জনগণকে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে কোণঠাসা করে রাখা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ মূলক কোনো পোস্ট করা হলে কিংবা লাইক কমেন্ট করা হলে সাইবার সিকিউরিটি বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দোহাই দিয়ে নিরপরাধ জনগণকে আটক করে রাখা হয়েছে। জঙ্গি নাটক সাজিয়ে অহরহ দেশ প্রেমিক নাগরিককে জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে। জনগণের কণ্ঠরোধ করার জন্য এসব সংবিধান বিরোধী আইন গুলো প্রণয়ণ করা হয়েছিলো।
রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ড আখ্যা দিয়ে জননিরাপত্তা আইনের বেড়াজালে অহরহ মানুষকে জেলের প্রকোষ্ঠে বন্দী করে রাখা হয়েছে যুগের পর যুগ। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতির কথা বলে নিরাপরাধ পথচারীদের ইয়াবা কিংবা গাঁজা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে মাদক আইনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। একতাবদ্ধভাবে জড়ো হয়ে বঙ্গবন্ধুর মুরাল ভাঙ্গার মিথ্যা মামলা সাজিয়ে নিরপরাধ মানুষদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি মামলা দিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষকে বন্দী করে রাখা হয় কিংবা মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সুরক্ষা আইনের নাম দিয়ে তার মূর্তিকে রক্ষা করার জন্য অহরহ মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অনধিকার জড়ো হওয়া বঙ্গবন্ধুর মুরালে আঘাত করা এসব মামলা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো। কারো বিরুদ্ধে রোষানল থাকলে তাকে সাইবার সিকিউরিটি মামলা কিংবা বঙ্গবন্ধুর মুরাল ভাঙ্গার মিথ্যা মামলা দিয়ে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। জনগণ যাতে রাস্তায় নামতে না পারে সেই জন্য জননিরাপত্তা আইন দিয়ে শায়েস্তা করা হয়েছে। পান থেকে চুন খসলে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় আসামি করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইন , জননিরাপত্তা আইন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সুরক্ষা আইন, রাষ্ট্রদ্রোহী আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে জনগণকে যারপর নাই নির্যাতন করা হয়েছে। সভা সমাবেশ করতে গেলেই অনাধিকার জড়ো হওয়ায়ার নাম দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়েছে হাজার হাজার। জনগণের মৌলিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। নিজেদের অধিকারের কথা বলতে না পারার কারণে দেশের জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে। অধিকারের কথা বলতে গেলেই জঙ্গি নাটক সাজিয়ে জঙ্গি আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমানকে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে জয়কে অপহরণের দায়ে সাজা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। যা জনগণের কাছে হাস্যকর মনে হলেও সেই মিথ্যা মামলায় আইনকে কুক্ষিগত করে তাদেরকে সাজা দেয়া হয়েছে। যা দেশের জন্য লজ্জাজনক বটে। এরকম ভিত্তিহীন মামলায় জড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে। অবাস্তব কিছু কথাবার্তা বলে ফ্যাসিবাদী বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে মসনদে আলার চেয়ে বেশি প্রমাণ করতে চেয়েছে।
কথায় কথায় যাকে তাকে রাজাকার বলে হেনেস্তা করা হয়েছে। বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোক্ষম অস্ত্র ছিলো রাজাকার ট্যাগ লাগিয়ে তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তার করে জনবিপ্লব ও জন আকাঙ্ক্ষাকে নির্বাসিত করা। দেশটাকে একমাত্র তার নিজের ও পরিবারের জন্যও ওয়াকফ করে দেওয়া হয়েছিলো। জনগণকে শায়েস্তা করার একমাত্র অস্ত্র ছিলো এই কালো আইনগুলো। কালো আইনগুলোর বদৌলতে নিঃস্ব হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বারবার। তা আদৌ কাম্য ছিল না। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে বারবার প্রহসন করা হয়েছে ।দেশটা আমার বাবার বলে বলেই দেশটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অদূর ভবিষ্যতে সরকারে যেই আসুক না কেন জনগণ চায়না এই কালো আইনগুলো দ্বারা জনগণ শোষিত হোক বা জুলুম নির্যাতনের শিকার হোক। দেশের ১৮ কোটি জনগণের প্রত্যাশা ও দাবী হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন সংস্কারের অংশ হিসেবে এসব কালো আইনগুলোকে অচিরেই বন্ধ করে জনগণের বাকস্বাধীনতার সুযোগ করে দেয়। বাকস্বাধীনতা হচ্ছে জনগণের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার যেন আর কখনো হরণ না হয়। এই প্রত্যাশা করছেন দেশের ১৮ কোটি জনগণ। দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রত্যাশা সংস্কারের অংশ হিসেবে সর্বপ্রথম কালো আইন গুলোকে প্রত্যাহার কিংবা বন্ধ করে দেওয়া হোক।