সামাজিক মাধ্যমে ‘উস্কানিমূলক’ পোস্টের জেরে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ‘উত্তেজনা’র প্রসঙ্গে বার্তা দিয়েছে ভারত সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘চরমপন্থি উপাদানগুলোর’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর কথিত হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ নিন্দা জানান তিনি।
রণধীর জয়সওয়ালের দাবি, এই উত্তেজনার মূল কারণ সামাজিক মাধ্যমের ‘উস্কানিমূলক’ পোস্ট।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ধরনের ‘চরমপন্থি উপাদানের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানায় ভারত।
এদিকে গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেনে যৌথবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারেক আজিজ জানান, ওই ঘটনায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে অন্তত ৮০ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার (৬ নভেম্বর) রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন বিশৃঙ্খলাকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়।
আইএসপিআরে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ৬টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে দুষ্কৃতিকারীরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুষ্কৃতিকারীরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড হামলা চালায় এবং ভারী ইট পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়তে শুরু করে।
এতে সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্যসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়াও, ঘটনাস্থলে দুষ্কৃতিকারীরা ইট ছুঁড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশীল্ড ভেঙে ফেলে।
এ অভিযানের পর দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্তকরণে যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় গেলেলুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় যৌথবাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে। এসময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে।
বর্তমানে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং হাজারী গলিসহ নগরীর অন্যান্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনীর এ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।