শফিউল আলম, রাউজানঃ চট্টগ্রামের রাউজানে বিভিন্ন স্থানে সড়কের দুপাশে, কবরস্থান, পুকুর, দিঘির পাড়ে, পাহাড়ী এলাকার টিলা ভুমিতে এক সময়ে প্রচুর পরিমান খেজুর গাছ ছিল । শীতের মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছের আগা চেছে খেজুর গাছ থেকে রস আহরনের জন্য প্রস্তুত রাখতো এলাকার লোকজন । শীতের সময়ে খেজুর গাছ কেটে খেজুর গাছের আগায় কলস, বসিয়ে খেজুরের রস আহরন করতো । প্রতিদিন ভোরে খেজুর গাছ থেকে আহরিত কলসভরা রস নামাতো এলাকার লোকজন । খেজুর রস বিক্রয় করতো । খেজুর রস দিয়ে বানানো হতো বিভিন্ন রকমের সুস্বাধু পিঠা, ভ্যাপা পিটা তৈয়ারী করে প্রতিটি ঘরে ঘরে সিদ্ব করা খেজুরের রস দিয়ে ভ্যাপা পিঠা খেতো সকলেই ।
এছাড়া ও খেজুরের রস সিদ্ব করে খেজুরের গুড় তৈয়ারী করতো রাউজানের রমজান আলী হাট, পুর্ব রাউজান, কদলপুর এলাকায়। তৈয়ারী করা খেজুরের রস তৈয়ারী করা গুড় হাটে বাজারে বিক্রয় করা হতো । শীতের মৌসুমের শুরুতেই উত্তর বঙ্গ থেকে দল বেধে আসতো খেজুর গাছের রস আহরনের জন্য লোকজন । তারা গাছের মালিক থেকে টাকা দিয়ে খেজুর গাছ নিয়ে খেজুর গাছ কেটে রস আহরন করে খেজুরের গুড় তৈয়ারী করতো । তৈয়ারী করা খেজুরের গুড় চট্টগ্রাম নগরীতে নিয়ে বিক্রয় করতো । কালের বিবর্তনে দিন দিন বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার চিরচেনা খেজুর গাছ। নেই খেজুর গাছের রস । খেজুর গাছ কেটে ইটের ভাটায় জ্বালানী কাঠ হিসাবে ব্যবহার করায় নেই খেজুর গাছ, নেই সুস্বাধু খেজুর গাছের রস । তবে রাউজানের পশ্চিম রাউজান, দক্ষিন হিংগলা, হিংগলা, সুড়ঙ্গা, এয়াসিন্ নগর, পুর্ব রাউজান, কদলপুর, হলদিয়া এলাকায় অল্প সংখ্যক খেজুর গাছ রয়েছে । শীতের মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছ কেটেছে । শীতের মৌসুম শুরু হলে খেজুর গাছ কেটে গাছ থেকে খেজুরের রস আহরন করবে এলাকার লোকজন । হেমন্তের শেষে শীতের ঠান্ডা পরশে মাঝেই বাঙালির কাছে খেজুর গাছের রসে নিজেকে ডুবিয়ে নেওয়ার সুন্দর এক মাধ্যম আবহমান বাংলার চাষী।
ঘণ কুয়াশা ঢাকা কন কনে শীতের সকালে একগ্লাস খেজুর রস পানে যে অমৃত তা সবারই জানা। কিন্তু বর্তমানে বাস্তবে প্রায় অসম্ভব কারনে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার খেজুর গাছ আর কিছু কিছূ স্থানে দুই-একটা রয়েছে গাছিরা শীতের মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস আহরন করার জন্য গাছ কেটেছে।
রাউজান উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই ছিল পর্যাপ্ত পরিমান খেজুর গাছ ছিল অনেক গাছি। কিন্তু বর্তমানে এসব গাছ-পালা কেটে তৈরী করা হচ্ছে কল-কারখানা সহ আবাসিক ভবন ও ইটের ভাটায় জ্বালানী কাঠ হিসাবে ব্যবহার করায় বিলীন হয়ে গেছে খেজুর গাছ।
সরেজমিনে গিয়ে কয়েকটি গ্রামে কিছু খেজুর গাছের দেখা মিললেও মেলেনি তেমন গাছির সন্ধান। আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক কম। বিভিন্ন গ্রামের গাছি সাথে কথা বললে তারা জানান, এক সময় তাঁরা একাই ২০-৩০টি গাছ ছাটাতেন রস সংগ্রহ করার জন্য, আর এভাবেই চালাতেন তার ছোট পরিবার। কিন্তু বর্তমানে গাছের সংখ্যা খুবই কম, আগের মত রসও হয়না। এই শীত কাল গ্রামীণ মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গ্রামীণ জীবনে শীত আসে বিশেষ করে চাষীদের কাছে সে তো বিভিন্ন মাত্রায় রূপ নিয়ে। স্বপ্ন আর প্রত্যাশায় তাদের অনেক খানি খেজুর গাছের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি বসবাস হয়ে যায়। নানা ভাবে জড়িত চাষীর জীবন সংগ্রামে বহু কষ্টের মাঝে অনেক প্রাপ্তিই যুক্ত হয় বাংলার এই জনপ্রিয় তরুবৃক্ষ খেজুর গাছ সঙ্গে। শীত আমেজে প্রকৃতির মাঝ হতে সংগীহিত খেজুর রস চাষীরা যেন চষে বেড়ায় সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় মেঠো পথ ধরে, তারই বহিঃপ্রকাশে যেন চমৎকার নান্দনিকতা এবং অপরূপ দৃশ্য অনুভব করে তা অবশ্যই শৈল্পীকতার নিদর্শন। তবে এই গ্রাম-বাংলার জন-প্রিয় খেজুর গাছ দিন দিন অযন্ত-অবেহলায় রাউজান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সময়ে সাথে সাথে, এক সময় সকাল হলে দেখা মিলত চাষী ভাইদের, বর্তমান সময়ে এই শৈল্পীকতার নিদর্শন যেন আমাদের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। খেজুর গাছ বিলুপ্তি হওয়ার কারনে খেজুরের রস বিক্রেতা ও গাছি সহ আরো যারা এ ধরনের মৌসুমী পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল তারা আজ বাধ্য হয়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে।
তাছাড়া যেসকল খেজুর গাছ রয়েছে তাতে যে রস পাওয়া যায় তাতে চাহিদা ১ শতাংশ হবে বলে মনে হয় না। গ্রামগুলোতে জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়নে মানুষের সচেতনতার অভাবে গ্রাম থেকে খেজুর গাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। এক সময় খেজুর গাছের রস ও তার গুড়ের খ্যাতি থাকলেও কালের বিবর্তনে সম্পুর্ন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্য। এখনো কিছূ কিছূ স্থানে কিছূ সংখ্যা খেজুর গাছ দেখাগেলেও মানুষের চাহিদার তুলনায় পাওয়া যায় না রস, তাই এসব গাছ থেকে তেমন একটা রস সংগ্রহ করতে গাছি ভাইদের দেখা মিলছেনা। তাই এতে শুধু খেজুর গাছ নয়, হারিয়ে যাচ্ছে অতীত ঐতিহ্য।