ইসলামী দল গুলোর বিভাজন ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়
বাংলাদেশ ৯০% মুসলমানের দেশ। দেশের মানুষ খুবই ধর্মপরায়ণ। পির আউলিয়ার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা অনন্তকাল ধরে এদেশের মানুষের অহংকার ও অলংকার। আরব বণিক ও ধর্মপ্রচারকগণের নিরলস প্রচেষ্টায় এদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারিত প্রসারিত হয়েছে। সুদুর ইয়ামেন থেকে হযরত শাহজালাল ইয়ামনি রহমতুল্লাহি আলাইহি গৌর গোবিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এদেশে ইসলামি শাসনের গোড়াপত্তন করেন। পরবর্তীতে বখতিয়ার খিলজী ১৭ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে এদেশে ইসলামী শাসনের ভিত্তি সুদৃঢ় করেন। উপমহাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যুগে যুগে পির আউলিয়াগণ আগমন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। তাদের নীতি নৈতিকতা ও আখলাক চরিত্রে বিমুগ্ধ হয়ে দলে দলে লোকেরা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ভারতীয় উপমহাদেশকে শাসন করেছেন সহস্রাব্দ পর্যন্ত মুসলিম শাসকরা। চট্টগ্রাম সাগর তীরবর্তী হাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইসলাম প্রচারকগণ আগমন করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। তারই ধারাবাহিকতায় সমগ্র বাংলাদেশে ইসলামের জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে।
ইসলাম ধর্ম চার মাযহাবে বিভক্ত। হানাফি,শাফি, মালেকি ও হাম্বলি। ইসলাম ধর্মের উৎস চারটি কোরআন, সুন্নাহ ,উম্মতে ইজমা ও কিয়াস। ইসলামের মৌলিক বিষয় এক ও অভিন্ন হলেও ছোটখাটো কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। দ্বন্দ্বের জেরে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দল ও উপদল। ইসলামের মূল উৎস এক ও অভিন্ন হলেও ছোটখাট দ্বন্দ্বের জেরে বিভিন্ন ইসলামিক দলের উত্থান হয়েছে। ইসলামী দল গুলোর বিভাজনের ফলশ্রুতিতে মুসলমানগন আজ দ্বিধা বিভক্ত। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ইসলামিক দলগুলো মধ্যে প্রায় ৫৪ টি দল রয়েছে। কওমি, আলিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে একাধিক দল উপদলে বিভক্তি রয়েছে। তাদের বিভক্তির জেরে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। সম্প্রতি রব উঠেছে সকল মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। ডক্টর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর মতে মসলক যার যার দ্বীন ইসলাম সবার। ছোট খাটো দ্বন্দ্বগুলো যদি পরিহার করা সম্ভব হয় তাহলে অচিরেই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে বলে বুদ্ধিজীবী মহলের ধারণা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো এক ও ভিন্ন সবাই স্বীকার করে। কিন্তু ছোটখাটো দ্বন্দ্ব নিয়ে এরকম বিভাজন কোনক্রমেই মেনে নেয়া যায় না ।
এখনই সময় এসেছে সকল মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। যদি ইসলামী দল গুলো ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র । আশা করি সকল ইসলামিক দলগুলো কিছু কিছু ছাড় দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এরই মধ্যে কিছু কিছু ইসলামিক দল ঐক্যের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটাকে বোদ্ধামহল সাধুবাদ জানিয়েছে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই পরিবর্তনে নিজেদের পরিবর্তন করে যদি ইসলামিক দলগুলি রেষারেষি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে তাহলে তাদের দমিয়ে রাখা অসম্ভব বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। সুতরাং এখন সময় এসেছে সকল মুসলিম ও ইসলামী দল গুলোর ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুদৃঢ় আন্দোলন করা। ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হলে সকল কুসংস্কার, দুর্নীতি, অসদাচরণ দূরবিভূত হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বলে বোদ্ধমহলের ধারণা। বাংলাদেশের সকল মুসলমানের প্রত্যাশা ইসলামী দলগুলোও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ইসলামের বিজয় সুনিশ্চিত করবে এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।