বৃটিশ প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রী
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়ে সব সময় অন্য শক্তির ওপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় এলেই তারা (বিএনপি) অন্য কোনো শক্তি খোঁজে, যারা তাদের ক্ষমতায় বসাতে পারে। বৃটেনের বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় দলের (এপিপিজি) ভাইস চেয়ার ও ইন্দো-বৃটিশ বিষয়ক এপিপিজি’র চেয়ার বীরেন্দ্র শর্মা এমপির নেতৃত্বে দেশটির একটি পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে রোববার তিনি এ কথা বলেন। কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের ওই দলের অন্যরা হলেন- প্রাক্তন টেক ও ডিজিটাল অর্থনীতির কনজারভেটিভ মন্ত্রী পল স্কুলি, ইউকে হাউস অফ কমন্স সিলেক্ট কমিটির মেম্বার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স নীল কোয়েল, হাউস অফ কমন্সের বিরোধীদলীয় হুইপ অ্যান্ড্রু ওয়েস্টার্ন এবং হাউস অফ কমন্সের সিনিয়র সংসদীয় সহকারী ডমিনিক মফিট। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতে বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব এম সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। গত ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশে বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর নতুন সরকারের পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন বৃটিশ প্রতিনিধি দলের এটাই প্রথম সাক্ষাৎ।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, যখনই বিএনপি তাদের ক্ষমতায় বসানোর কাউকে পায় না, তখনই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে সরে আসে। বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় এসেছে। তারা মনে করে, কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। তারা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে।
বিএনপি ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে একজন সামরিক লোককে বসিয়েছিল এবং এই ব্যক্তি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে- এমন অভিযোগ করে সরকার প্রধান বলেন, দীর্ঘ ২৯ বছর অগণতান্ত্রিক শক্তি। বাংলাদেশ শাসন করেছে। ওই সময় দেশে গণতন্ত্র ছিল না। ফলে দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিএনপির নেতৃত্ব নেই এবং তারা সাধারণত লন্ডন থেকে নির্দেশনা পায় এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফলে ২০০৮ সালের পর তারা আন্তরিকভাবে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বর্জন করে। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও একটি আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত যখন তারা মনে করেছে যে, নির্বাচনে জিততে পারবে না, তখন প্রার্থিতাই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট পায় ৩০টি আসন এবং আওয়ামী লীগ পায় ২৩৩টি আসন। এতে প্রমাণিত হয় গণমানুষের মধ্যে বিএনপির কোনো ভিত্তি নেই। বিএনপি ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করলেও জনগণ ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির ভোট বাতিল করার আবেদন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ স্থান: এদিকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ অগ্রাধিকার পায় উল্লেখ করে বৃটিশ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃটিশ পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। বৃটিশ বিনিয়োগকারীরা চাইলে বাংলাদেশ তাদের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করতে পারে। কারণ অন্যান্য দেশ এরই মধ্যে তাদের ডেডিকেটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল পেয়েছে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য আদর্শ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে ভালোভাবে সংযুক্ত; যেখানে ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে। এটি ৩০০ কোটির বাজার, ফলে কেউ যদি এখানে বিনিয়োগ করে তবে উৎপাদিত পণ্যের বাজার পেতে সমস্যা হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনিয়োগের প্রক্রিয়াগত সময় হ্রাস করার লক্ষ্যে সরকার এরই মধ্যে ১৭০টি আইটেমের মধ্যে ১১০টি আইটেম অনলাইনে যুক্ত করেছে। বাকি ৬০টি আইটেম খুব শিগগিরই অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। বৃটিশ এমপিরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে নিবিড়ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে বিশ্বকেই পথ খুঁজতে হবে: ওদিকে বৃটিশ পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে এবং সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চিন্তা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরো বিশ্বের উচিত এই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করা, যাতে মিয়ানমারের নাগরিকরা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে এবং সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে। এ সময় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশের জন্য ভারী বোঝা হয়ে উঠছে বলেও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে নৃশংস দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠককালে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭ সালে অমানবিক নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের পর বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলেও, ছয় বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও এই লক্ষ্যে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে বৃটিশ প্রতিনিধি দল জানায়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের উদার আতিথেয়তা ও দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে তাদের সমর্থন পুনর্নিশ্চিত করতে ৩০ শে জানুয়ারি কক্সবাজারস্থ ক্যাম্প পরিদর্শন করবে তারা। ৩১ শে জানুয়ারি তাদের লন্ডনে ফেরার কথা রয়েছে।