চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এর যৌথ উদ্যোগে ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ সকাল ১০:০০ টা থেকে দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জীব বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক বায়োটেকনোলজি কনফারেন্স-২০২৪ (ওইঈ-২০২৪) অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত কনফারেন্সের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। কনফারেন্স উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক মাননীয় উপাচার্য, বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এর সভাপতি প্রফেসর এমিরেটাস ড. এ. কে. আজাদ চৌধুরী। উক্ত কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সম্মানিত সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ আবু তাহের এবং অনলাইনে সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। এছাড়াও কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব (আইসিটি) এন.এম. জিয়াউল আলম পিএএ এবং আইসিডিডিআর, বি এর সিনিয়র বিজ্ঞানী (এমিরেটাস) ড. রুবহানা রাকিব।
কনফারেন্স চেয়ার ও ওইঈ-২০২৪ এর আহবায়ক এবং চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. নাজনীন নাহার ইসলাম এর সভাপতিত্বে কনফারেন্সে অন্যানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এর পরিচালক ও ওইঈ-২০২৪ এর কনফারেন্স কো-চেয়ার ড. মোঃ সলিমুল্লাহ, চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ও কনফারেন্স বাস্তবায়ন ওইঈ-২০২৪ এর সদস্য-সচিব ড. মোহাম্মদ আল্-ফোরকান, চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. লুলু ওয়াল মরজান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. আদনান মান্নান।
কনফারেন্সের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম-৫(হাটহাজারী) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান অতিথি ও সম্মানিত অতিথি কনফারেন্সে বিভিন্ন ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন এবং রানারআপদের মধ্যে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।
কনফারেন্সের উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান। তিনি বিশ^ায়নের এ যুগে আগামী দিনের জীব প্রযুক্তি কিভাবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করায় আয়োজকবৃন্দকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। মাননীয় উপাচার্য বলেন, “ দৈনন্দিন জীবনের সাথে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাছাড়া এ বিশে^ করোনাসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ও মহামারি লেগেই আছে। এসব বিষয়কে মোকাবেলা করতে আমাদের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জ্ঞান-গবেষণায় অধিকতর মনোযোগী হয়ে কাজ করতে হবে।” তিনি বলেন,“ দেশে খাদ্যের প্রবৃদ্ধি অর্জনে জীব প্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। জীব প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মানবদেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শিক্ষক, গবেষক ও বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন গবেষণায় এগিয়ে আসতে হবে।” মাননীয় উপাচার্য বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তনয়া বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষক-গবেষকদের নতুন নতুন উদ্ভাবনী বিষয় আবিষ্কারের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র ও সুযোগ-সুবিধা অবারিত করেছেন।’ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিক্ষক-গবেষকদের দেশ-জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণে কাজ করার জন্য তিনি আহবান জানান।’ এ কনফারেন্সে বিজ্ঞানীদের উপস্থাপিত বিষয়গুলো আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে উদ্ভাবিত গবেষণাকর্ম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মর্মে মাননীয় উপাচার্য প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। পরে মাননীয় উপাচার্য অতিথিদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আইসিটি মন্ত্রাণালয়ের অর্থায়নে চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগে নবপ্রতিষ্ঠিত বায়োটেকনোলজি রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টার (বিআরআইসি) বায়োইনফরমেটিকস ল্যাব এর উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, কনফারেন্সে স্বাস্থ্য, শিল্প, উদ্ভিদ, ঔষধ শিল্প, সমুদ্র বিজ্ঞান, পরিবেশ এবং ডাটা সায়েন্সেসে কিভাবে জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার হয় তা বিভিন্ন পর্বে উপস্থাপিত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এর যৌথ উদ্যোগে পৃথিবীর ৮টি দেশ যথাক্রমে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, মালেশিয়া, ভারত, জাপান ও জার্মানী থেকে ৫২০ জন বিজ্ঞানী, শিক্ষক ও গবেষক আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। কনফারেন্সে প্রায় ৫২টি প্রবন্ধ এবং ২২০টি পোস্টার উপস্থাপিত হয়েছে। তাছাড়াও কনফারেন্সে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অস্থায়ী স্টল স্থাপনের মাধ্যমে তাদের সেবা ও কার্যক্রম স্ব স্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে জনসন্মুখে উপস্থাপন করেছে।
কনফারেন্সের সমাপনী পর্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিসিএসআইআর, চট্টগ্রাম এর পরিচালক ড. বরুণ কান্তি সাহা, আইসিডিডিআর, বি এর সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও বিজিএসএল এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী চৌধুরী মোহাম্মদ মহসীন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে বিজয়ী ও রানারআপদের মধ্যে পুরষ্কার ঘোষণা করেন চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোঃ আবু আহমেদ ও প্রফেসর ড. এ.এম মাসুদূল আজাদ চৌধুরী। সেশন উপস্থাপনা করেন উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থী সুস্মিতা বড়ুয়া ও সিলভিয়া নাজনীন। কনফারেন্সের উভয় পর্বে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানী, শিক্ষক-গবেষক, শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিল উম্মে সালমা চৌধুরী ও রাহী হাসান চৌধুরীর সঞ্চলনায় কনফারেন্সের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয় এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচিত হয়। কনফারেন্সে চবি জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের পরিচিতি ও বিভাগের অর্জনসমূহ এবং ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির বিভিন্ন কার্যক্রম মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। কনফারেন্সে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পাহাড়-পর্বত-সাগর-নদীর সমারোহে রচিত নৃত্যর তালে তালে বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।