সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বল করছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিপিএল-এ নিজের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে এই দৃশ্য আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে ক্রিকেট অঙ্গনে। বিপিএল’র দশম আসরে মাশরাফির খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। তিনি বলেই ফেলেন- মাশরাফির এই ভাবে খেলা বিপিএল’র মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মিরপুরে তার নেতৃত্বে দু’টি ম্যাচই হেরেছে সিলেট। তাই সমালোচনার ডালপালা বাড়তে শুরু করে প্রবল বেগে। এবার নিজেদের হোম ভেন্যুতে খেলবে দলটি। তাই প্রশ্ন হচ্ছে- এবারো কি একাদশে থাকছেন দেশের সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফি! সংবাদ মাধ্যমের চোখগুলো গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খুঁজতে থাকে তাকে। কিন্তু তিনি যে আসেননি মাঠে! তাহলে কি নিজেদের হোম ভেন্যুতে আজ সন্ধ্যায় কুমিল্লার বিপক্ষে খেলবেন না? এরই মধ্যে অনুশীলনে আসা দলের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব দলের পক্ষ থেকে জানান- অধিনায়কের প্রতি তাদের আস্থার কথা। তিনি বলেন, ‘মাশরাফি ভাই যোদ্ধা এবং উনি নেতা।
আমি ছোটবেলা থেকে উনার খেলা দেখে দেখেই বড় হয়েছি। মাশরাফি ভাই-সাকিব ভাই, উনাদের খেলা দেখে দেখে বড় হয়েছি। আপনি জানেন উনার পায়ে অনেকগুলো অস্ত্রোপচার হয়েছে এরপরেও দেশের জন্য খেলে গেছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অনুপ্রেরণা।’ তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে- শেষ পর্যন্ত কি একাদশের বাইরে থাকবেন ম্যাশ!
সিলেটের হয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাশরাফি বল করেছিলেন আড়াই ওভার। দ্বিতীয়টিতে করেনইনি। ব্যাট হাতে তিনে নেমেও সুবিধা করতে পারেননি। ফিটনেস যে প্রায় শূন্যের পর্যায়ে সেটিও স্পষ্ট। আশরাফুলের পর আরেক সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানও তাকে নিয়ে কঠিন সমালোচনা করেন। তিনি বলেছেন টুর্নামেন্টের ইমেজ সংকটের’ কথাও। এমনকি মাশরাফিও বলেছেন তার খেলা আদর্শ নয়। তবে তার ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক ও সতীর্থদের সমর্থন এখনও মাশরাফির জন্যই। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে সাকিব ফের বললেন, ‘এটা বলবো, উনি রোলমডেল আমাদের ক্রিকেটারদের জন্য। বিশেষ করে পেস বোলারদের জন্য। উনি ব্যথাকে ব্যথা হিসেবে কখনই নেননি। আমরা যারা তরুণ আছি, আমাদেরকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। অনেক বেশি অনুপ্রেরণা দেয়। উনার মতো নেতা যদি ড্রেসিংরুমে থাকে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে সিলেটের ম্যাচটায় গ্যালারি উত্তাল হয়ে উঠবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। গতবার নিজেদের প্রথম মৌসুমেই সিলেট হয়ে ওঠে সাধারণ দর্শকদের প্রিয় দল। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সিলেটের দর্শকদের যে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে, সেটা অন্য কোনো স্টেডিয়ামে বিপিএল’র অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য দেখা যায় না।
মাশরাফিদের সমর্থন ছিল মিরপুর, চট্টগ্রামেও। তারুণ্যের সৌজন্যে সিলেটের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট মাঠে টেনেছে দর্শকদের। প্রথমবার এসে দাপট দেখিয়েই নিশ্চিত করে প্লে-অফ। শেষ চারের লড়াইয়ে হোঁচট খেলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে জায়গা করে নেয়। কিন্তু ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে হেরে স্বপ্নযাত্রার ইতি ঘটে সিলেটের। কাল সেই কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিপিএল’র সিলেট পর্ব শুরু করবে স্ট্রাইকার্সরা।
ঘরের মাঠের দর্শকদের বিপক্ষে খেলতে মুখিয়ে আছে স্ট্রাইকার্সের খেলোয়াড়রাও। আজ সিলেটের অনুশীলনে সাংবাদিকদের এ কথাই বললেন তানজিম হাসান, ‘সিলেটে যখনই আমরা খেলতে আসি, আমরা অনেক ভালো দর্শক পাই, সমর্থন পাই। তারা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।’ বড় দর্শকের সঙ্গে আসে প্রত্যাশার চাপ। তানজিম অবশ্য চাপ নিচ্ছেন না, ‘কখনই না। দর্শকরা আমাদের অনুপ্রেরণা। কখনই চাপ হিসেবে নেই না। যত বেশি দর্শক আসবে, তত ভালো খেলার উদ্দীপনা পাবো।’
দর্শকদের মাঠে টানতে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামও সেজেছে দারুণ সাজে। চা বাগানে ঘেরা স্টেডিয়ামের রাস্তার পাশে রঙিন ব্যানার। মাঠের ভেতরে ফ্লাডলাইটের টাওয়ারেও তাই। স্টেডিয়ামের ভেতরে উড়ছে ‘স্কাই বেলুন, সেখানেও দর্শকদের মাঠে এসে টি-টোয়েন্টির বিনোদন নেয়ার বার্তা। গতবারের মতো এবারও সিলেটের দর্শকরা মাঠে আসবে, এমন আশা করাই যায়।