বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি হচ্ছে মানুষ খুন করা দল। তারা প্রতিদিন আমাদের পদত্যাগ চায়। সে দাবিতে প্রতিদিন আন্দোলন করছে, করুক আপত্তি নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে মানুষের ক্ষতি যেন করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওস্থ সড়ক ভবনে দেশের ৮ বিভাগের ৩৯ জেলায় একযোগে নবনির্মিত দেড়শ’ সেতু এবং ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রওশন আরা মান্নান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (আরএইচডি) সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমার আছে জনগণ। আমার তো আর কেউ নেই। বাবা-মা ভাইবোন সবই তো হারিয়েছি।
‘৭৫ পরবর্তী স্বৈরশাসনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল দেশকে তারা কী দিয়েছে? বিএনপি’র শাসনামলে দেশে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে মানুষের ওপর। তারা জঙ্গিবাদ ও বাংলাভাই সৃষ্টি করে।
আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, আন্দোলনের নামে সম্পদ ধ্বংস করেছে। অগ্নিসন্ত্রাসে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে যেন এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসের পরিস্থিতি আর না আসে। শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নেয়া হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া রয়েছে তারা তৎক্ষণাৎ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, এখন তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন, নানান কথা বলে। সেটা নিয়ে আমি এখন সমালোচনা করতে চাই না। কারণ, অনেকগুলো ভালো কাজ করেছি। তাই ভালো কথাগুলো বলে যেতে চাই। কিন্তু এদের কথা ও কাজ সবই ধ্বংসাত্মক। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আমি সতর্ক করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচন এবং পরের উপনির্বাচন মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্যজোট ৩শ’ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। এই হলো তাদের শক্তি, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা।
তিনি বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ কী ছিল, তা এখনকার তরুণরা জানে না। তাদের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। ঘরে ঘরে সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ সুপেয় পানির নিশ্চয়তা পেয়েছে, যেজন্য এক সময় হাহাকার ছিল। এ সময় সড়কে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চালকদেরকে মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যারা বাস, ট্রাক বা গাড়ি চালায় রাস্তায় তাদের যে একটা অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, ওভারটেক করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এজন্য চালকদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার পরপর বাস ও ট্রাকের চালক ও যাত্রীরা যাতে একটু বিশ্রাম নিতে পারে, সেজন্য বিশ্রামাগার করে দিতে বলেছি। ইতিমধ্যে কয়েকটা জায়গায় নির্মাণ হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আমরা আরও করে দেবো। কেননা গাড়ি চালাতে যেমন পেট্রোল লাগে, যাকে দিয়ে চালাবেন তারও তো পেট্রোল দরকার। সেওতো একটা মানুষ, তারতো বিশ্রাম দরকার। বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে, তাদের যত্ন নিতে হবে। ড্রাইভারদের বলবো, দুর্ঘটনায় শুধু মানুষের জীবন যায়- তা না, নিজেরও তো ক্ষতি হয়। গতি মেনে চলতে হবে। সড়কে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের হামলায় চুপ থাকায় বিএনপি’র সমালোচনা করেন। বলেন, ফিলিস্তিনের ওপর বারবার হামলা আর সহ্য করা যায় না। আমি দেখি অনেকেই (বিএনপি) চুপ থাকেন। কারণ যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা যদি আবার নাখোশ হয়। তাই যারা নির্যাতিত তাদের কথা বলার সাহস নাই। আর তারা আন্দোলন করে পদত্যাগের ডাক দেয়। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে। যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা জীবন দিয়ে দেখেছি। ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা করছে বিশেষ করে হাসপাতালে হামলা করে শিশু, নারী এবং মানুষ হত্যা করেছে আমরা তার নিন্দা জানিয়েছি। দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দখল হওয়া ভূমি তাদের ফেরত দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হলো, রক্তাক্ত শিশুদের চেহারা সহ্য করা যায় না। সেজন্য আগামী শুক্রবার আমি সকলকে অনুরোধ করবো জুমার পর দেশের প্রতিটি মসজিদে এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। কেননা শুধু মুসলিম নয়, হতাহতদের মধ্যে অন্য ধর্মাবলম্বীও রয়েছেন। আর শনিবার আমরা শোকদিবস ঘোষণা করেছি, সেদিন আমাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের যেসব নারী ও শিশুসহ জনগণ এখন কষ্ট পাচ্ছে তাদের জন্য আমরা ওষুধসহ শুকনো খাবার এবং শিশু ও নারীদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য পাঠাবো। কারণ আমাদের যেটুকুই সম্পদ তা নিয়ে আমরা সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে আছি। যতটুকু পারি সাহায্য আমরা করবো।