রাজধানীতে দ্বিতীয় দিনের মতো পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গতকাল ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। একই দাবিতে বিএনপি’র সঙ্গে পৃথকভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী গিয়ে শেষ হয়। এতে অংশ নিয়েছেন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ছেড়ে দেয়ার দিন শেষ। এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। আমাদের অধিকারকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। মঙ্গলবার সারা দেশে আপনারা (ক্ষমতাসীনরা) আমাদের ওপর যে অত্যাচার করেছেন, সেই অত্যাচারের সমুচিত জবাব আমরা দেবো ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের জনগণ ভোটের অধিকার আদায় করে নেবে। ১৫ বছর আপনাদের অত্যাচার আমরা সয়েছি, এই অত্যাচার আর আমরা সইবো না।
আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি’র মিটিং মিছিলে কোনো ধরনের ঝামেলা হয় না। আওয়ামী লীগ ঝামেলা তৈরি করতে চায় কেন? আমরা মিটিং-মিছিল করবো, আপনারা ইট মারবেন। আর আমরা ছেড়ে দেবো, এটা তো হবে না। আমরা দেশের জনগণ, বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা জেল খাটতে শিখেছি। মৃত্যুবরণ করতে শিখেছি, মিছিল করতে শিখেছি। আপনাদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারবো না। আমরা অত্যাচারের জবাব দেবো।
‘সংবিধানের বাইরে আমরা একচুলও নড়বো না’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, খুব ভালো কথা কাদের সাহেব। আপনার কথায় স্থির থাকেন। কথা হলো কোন সংবিধান? খায়রুল হকের সংবিধান নাকি বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা চাই অখ- সংবিধান, যেটি কাটাছেঁড়া করা হয়নি, সেটির অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো। এ ছাড়া আপনাদের তৈরি, খায়রুল হকের তৈরি সংবিধানের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না।
পদযাত্রায় অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, উপরে রোদ্র নিচে উত্তপ্ত রাজপথ আর আওয়ামী লীগের অত্যাচার, এই তিনটা বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। এই তিনটি বাধা অতিক্রম করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের কথা বলার অধিকার আদায় করতে হবে। ভোটের অধিকার আদায় করতে হবে। এই বাংলাদেশ কারও করদরাজ্য নয়। এদেশের মানুষের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এক দফার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করে নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। দেশের মানুষকে বিএনপি আবারো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে।
পূর্বঘোষিত বুধবারের পদযাত্রা বেলা ১১টার দিকে শুরু হলেও সকাল থেকেই রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও উত্তরা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানার নিয়ে অংশ নেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে আব্দুল্লাহপুর। বিএনপি ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢল নামে। এতে বন্ধ হয়ে যায় সড়কের একপাশ। অন্যপাশেও সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ ও গণপরিবহনের যাত্রীরা। বর্ণিল পোশাক, ক্যাপ, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে যাত্রাবাড়ী অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি। যাত্রাপথে বিভিন্ন এলাকা থেকে যুক্ত হন দলটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। আব্দুল্লাহপুর-বিমানবন্দর-কুড়িল বিশ্বরোড- নতুন বাজার-বাড্ডা-রামপুরা ব্রিজ-আবুল হোটেল- খিলগাঁও- বাসাবো- মুগদাপাড়া- সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর মধ্যে উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে মালিবাগ এলাকার আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। সেখান থেকে পদযাত্রাটি নিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়। বিএনপি’র এ পদযাত্রা ঘিরে দিনব্যাপী সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুক, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে পদযাত্রা সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।