শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুতে হওয়ার কথা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগেই বড় শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। আসন্ন ঈদের পরেই শুরু হবে নিয়োগ কার্যক্রম।
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ হয় চলতি বছরের শুরুতে। প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষক যোগদান করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এরপরও শিক্ষক সংকট দূর না হওয়ায় ফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই বৃহৎ শিক্ষক নিয়োগের আলোকে ফের বিভাগওয়ারি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এবার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে বিভাগভিত্তিক। এবারে কতসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। তবে সাত হাজার শিক্ষক নিয়োগের কথা শোনা গেলেও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশের আগে আর শূন্য পদ যুক্ত হবে।
সেক্ষেত্রে নিয়োগ দ্বিগুণও হতে পারে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষকের পদশূন্য রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৫৮টি। বাকি পদগুলো সহকারী শিক্ষকের। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৪। গড়ে ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক।
প্রথম দু’টি বিজ্ঞপ্তির ছয় বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম ধাপে তিন লাখ ৬০ হাজার ৭০০ ও দ্বিতীয় ধাপে চার লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৮টি আবেদন জমা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া অন্য জেলার আগ্রহী প্রার্থীরা ২৪শে জুন থেকে ৮ই জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
মাধ্যমিক পর্যায়ে বেড়েছে অবসরে যাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা। যার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঘাটতি। যা পূরণে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে চিঠি দেয়া হয় মন্ত্রণালয়ে। এরপর ঘাটতি পূরণে উদ্যোগ নেয়া হয় শিক্ষক নিয়োগের। শিক্ষককের ঘাটতি যাচাইয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এই তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ঈদের পর জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এই তথ্য মেলার পর আগস্টে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে নিয়োগ পাবেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষক। মাউশি সূত্রে জানা যায়, বিসিএস পরীক্ষার নন-ক্যাডর থেকে নিয়োগ দেয়া হলে শিক্ষক সংকট পূরণে অধিক সময় লেগে যেতে পারে। সে কারণে বিশেষভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে সুপারিশ করা হবে। তবে আপাতত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিসিএস প্যানেল থেকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পিএসসিতে আবেদন করার কথা রয়েছে।
তথ্যমতে, দেশে ৩৫১টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল আছে। এসব স্কুলে সহকারী শিক্ষকের পদে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। সহকারী শিক্ষকের পদ সাড়ে ১২ হাজার। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার পদ শূন্য। সবশেষ ২০২২ সালে সরকারি মাধ্যমিকে দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, নতুন শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক সমন্বয় করতে গিয়ে শিক্ষক সংকটের সমাধান হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের তালিকা চেয়েছে। এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বছরে দু’বার এ তালিকা তৈরি করে দ্রুত নিয়োগ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সারা দেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট আরও প্রকট। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কচ্ছপ গতির নিয়োগ কার্যক্রমে এই সংকট আরও বাড়ছে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা আনার জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু আদতে কতটুকু উপকারে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এনটিআরসিএ সর্বশেষ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি ৩২ হাজার ৪৩৮ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করে। এ সময় দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজারের বেশি। গণবিজ্ঞপ্তির পরও শিক্ষক সংকট রয়েছে ৩৬ হাজার। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নিবন্ধনের সার্বিক ফল প্রকাশের পর প্রকাশ করা হবে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি।
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মতো বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে না পঞ্চমে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রকাশ করার পরই দেয়া হবে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি। কবে নাগাদ প্রকাশিত হবে এই গণবিজ্ঞপ্তি তা বলা না হলেও দ্রুতই করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, যে পদগুলো খালি আছে ওইসব পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি। এ পদগুলোতে প্রার্থীই নেই। এসব পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের প্রস্তুত করতে হবে। আমরা পঞ্চম বা পরবর্তী গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব পদ পূরণ করতে চাই।