আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করতে হয় না। যখনই স্বাধীনভাবে নির্বাচন হয়েছে তখনই জনগণের বিশাল পরিমাণ ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করেছে। এটি একমাত্র সংগঠন, যারা মানুষের কথা বলে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেই জনগণের কল্যাণ হয়েছে। আর অন্যরা জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তা প্রমাণিত। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। যেসব দেশ বা যারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে তারা এসে দেখে যাক।
সরকার প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছেন, তার সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ হতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে পারে না। দলের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের আগে গতকাল সকালে তিনি গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। যেসব দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান। যেখানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোট প্রদান করেছেন। তিনি বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মেয়র নির্বাচিত করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানাডার একটি আদালতে যে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে, সেই বিএনপি এখন আওয়ামী লীগকে ভোট চোর বলছে। আওয়ামী লীগের ভোট চুরির দরকার নেই কারণ, এটি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে জনগণের ভোট পায় এবং এভাবে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে। তার দল যখনই পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে, ষড়যন্ত্রের কারণেই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যখনই ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে, তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও হয়েছিল। বিপরীতে, জনগণ কখনই সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপিকে ভোট দেয় না কারণ, তাদের জনগণের সেবা এবং উন্নতির জন্য কাজ করার কোনো আগ্রহই নেই বরং বড় ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছানোর কাজেই ব্যস্ত ছিল। তিনি বলেন, প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে, সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপিকে কেউ ভোট দেয়নি। তাই, তারা ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, বরং অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানুষকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে বিএনপি গঠন করেছিলেন। তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধ করতে ভোট কারচুপির সংস্কৃতি চালু করেন। আওয়ামী লীগ দেশবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি, আমার ভোট, আমার পছন্দ আওয়ামী লীগের স্লোগান। খুনি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল বিএনপি’র বিরুদ্ধে সবাই সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, বৈঠকে দলীয় সভাপতি নেতাকর্মীদের একগুচ্ছ পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অপপ্রচারের জবাব দেয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি যারা আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চান তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন। যার বিরুদ্ধে দলীয় ঐক্য বিনষ্টের অভিযোগ উঠবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে সভাপতি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলেছেন শেখ হাসিনা। কয়েকজন নেতা জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের বিতর্ক হয়। বৈঠকে শাজাহান খান মাদারীপুরে বাহাউদ্দিন নাছিমের কারণে আওয়ামী লীগ সংগঠন বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এ সময় বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যেহেতু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আমাকে অক্রমণ করা হয়েছে, সেজন্য আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিন। প্রধানমন্ত্রী বাহাউদ্দিন নাছিমকেও সুযোগ দেন। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শাজাহান খানের অত্যাচারে যারা আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত- তারাই বহিরাগততে পরিণত হয়েছে। তারা নিষ্পেষিত হচ্ছে। শাজাহান খান আওয়ামী লীগকে এখন জাসদ বানিয়ে ফেলেছেন। তার অত্যাচারে আওয়ামী লীগই অতিষ্ঠ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাহাউদ্দিন নাছিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি এবং দাদা ভাই (ইলিয়াস চৌধুরী-লিটন চৌধুরীর পিতা) শাজাহান খানকে আওয়ামী লীগে নেয়ার জন্য আমার মাথা খারাপ করেছিলে। আমাকে সারাক্ষণ এজন্য অনুরোধ করেছিলে।
এখন তুমিই এর বিরোধিতা করছো। শাজাহান খান যখন জাসদে ছিল, তখনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। শাজাহান খান বলেছিল যে, কোন পরিস্থিতিতে আমি জাসদে গেছি, তার পিতা এবং শাজাহান খান দুই জনেরই অবদান রয়েছে। দলীয় নেতারা বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী দু’জনকেই শান্ত থাকার এবং পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণ না করার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন মিলেমিশে কাজ করার সময়। এখন ঝগড়াঝাটি করার সময় নয়’-এই বলে দীর্ঘক্ষণ বিতর্কের অবসান ঘটান প্রধানমন্ত্রী। এদিকে বৈঠকে আরও দুই নেতা নিজেদের মধ্যকার বিবাদ নিয়ে কথা বলতে চাইলে অন্য নেতারা তাদেরকে বিরত করেন বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত কয়েক নেতা। তারা বলেন, বৈঠকে দলীয় সভাপতি নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরার নির্দেশনা দিয়েছেন।