মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে ১১ জুলাই থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির
হুঁশিয়ারি প্রস্তাবিত বাজেট পাস হওয়ার আগে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে আগামী ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারাদেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখা। মঙ্গলবার (২০ জুন) সকাল ১১ টায়, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এর এস রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দরা। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ও পেশাজীবীদের সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে সংগঠনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ লকিতুল্লাহ , বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শিক্ষক সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক শিমুল কান্তি মহাজন, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি নুরুল হক সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কানুনগো, দক্ষিন জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস চক্রবর্তী, উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকের হোসেন, নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আলতাজ মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সনজীব কুসুম চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পূর্বঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ১১ থেকে ১৩ জুন তিনদিনের ধর্মঘট পালন সহ শেষদিন (১৩জুন) জেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। তাছাড়া ১৪ জুন থেকে ২০ জুন, ২০২৩ সারাদেশে জেলায় জেলায় “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ” এর দাবিতে “সংবাদ সম্মেলন” অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং আগামী ২৫ জুন, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীকরণ” এর দাবিতে “ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাননীয় সংসদ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় এবং লিফলেট বিতরণ” এর কর্মসূচি রয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের নব্বই শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পায়। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। তাছাড়া সহকারি প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ গত ঈদ-উল-ফিতরে ১০০% উৎসব ভাতা প্রদান না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা আশাবাদী সরকার আসন্ন ঈদ-উল-আযহার পূর্বে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১০০% উৎসব ভাতা প্রদান করবেন। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পাননি। নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয়করণের ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়নি। বরং বিগত বাজেটের চেয়েও আনুপাতিক হারে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু তনয়া শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদুৎ কেন্দ্র ও মাতার বাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়ন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে হলে দরকার স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষা ও শিক্ষকের পেশাগত মান মর্যাদায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই।