উজানের ঢলে পানি বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬টি নদ-নদীর। এতে বন্যা আতঙ্কে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিবছর দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীরা বর্ষা মৌসুমে অনেকটা যাযাবরের মতো বাস করেন।
বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২২ ও ২৩ জুন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বড় ধরনের কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিনে কাশবনে ঘেরা জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসার চর নামক এ চরটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই, বন্যা শুরু হলে নিমেষেই তা ডুবে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে জেগে ওঠা মুসার চরসহ সবকটি উপজেলার বেশির ভাগ চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে নতুন বসতি। কিন্তু বন্যার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই আতঙ্ক বাড়ছে চরবাসীদের। আর তাই, কিছু বাড়ির সঙ্গে মাটির ধাপ উঁচু করে গরুসহ অন্যান্য গৃহপালিত পশুপাখি রাখার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। তবে, বন্যায় তাদের স্থান হবে নৌকা, কলাগাছের ভেলা আর ঘরের চাল। আর যাদের নৌকা নেই, তাদের অন্যের নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে দূরের কোনো উঁচু জায়গায়।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসার চরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান জানান, এখানে নতুন জেগে ওঠা চরে বসত গড়েছি। কেননা পার্শ্ববর্তী চরটি ভাঙনের কবলে পড়ে অন্যত্র জায়গা না পেয়ে এখানে বাড়ি করতে বাধ্য হয়েছি। নদীর পানি তীব্র বেড়েই চলেছে। কখন যে চরটি তলিয়ে যাবে তার ঠিক নেই।
একই চরের বাসিন্দা আকবর আলী জানান, গত বছরও বন্যা হয়েছিল এবং ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছিল। প্রতি বছরই এ রকম পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়।
বন্যার সময়টা কীভাবে পার করেন জানতে চাইলে চরের মানুষ জানান, প্রথমত বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করলে চৌকি উঁচু করে সেখানে অবস্থান করেন তারা। পানি আরও বেড়ে গেলে নৌকায় অবস্থান করতে হয়। আর গরুসহ অন্য গৃহপাতি পশু বাড়ির সঙ্গে মাটির ধাপ তৈরি করে সেখানে রাখা হয়। আর সেটিও যখন তলিয়ে যায় তখন নৌকা ভাড়া করে দূরবর্তী কোনো উঁচু জায়গায় স্থানান্তর করতে হয় বলে জানান তারা।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার পূর্বাভাস পেয়ে জেলা প্রশাসন থেকে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চরের মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়লে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনাসহ বিশুদ্ধ পানি ও ত্রাণের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২২ ও ২৩ জুন এসব নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী জানতে পেরেছে। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা না থাকার কথাও জানান তিনি।
জেলার ১৬ নদ-নদীর অববাহিকায় ছোট-বড় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলে বসবাস করছে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার।