মাছের উৎপাদন বাড়ানো ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ ধরায় চলছে নিষেধাজ্ঞা। ৬৫ দিনের এ নিষেধাজ্ঞায় জেলে পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৮৫ কেজি চাল দেয়ার কথা। তবে অভিযোগ ওঠেছে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের উদাসীনতা ও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকির অভাবে ভোলার ৬৭টি ইউনিয়নের জেলেরা পাননি এ সহায়তা।
জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জেলেদের জন্য প্রথম কিস্তির সহায়তার চাল গত ২২ মে জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে ছাড় করা হয়। নির্দেশনা ছিল এ চাল ৪ জুনের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে হবে। তবে মাঠ পর্যায়ে এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে, মৎস্য বিভাগের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক ট্রলার গোপনে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে উল্টো জরিমানার শিকার হয়েছেন। এ অবস্থায় খাদ্য সহায়তা দ্রুত বিতরণের দাবি জানিয়েছেন কর্মহীন জেলেরা।
কষ্টে কাটছে জেলে জীবন
সমুদ্রে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন বৃদ্ধি, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবছরের মতো শুরু হয়েছে ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সরকারের এ নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে সম্পূর্ণ বেকার দিন কাটাচ্ছেন ভোলার জেলেরা।
জেলার সর্ববৃহৎ মাছঘাট সামরাজে দেখা যায়, সাগরে মাছ ধরার প্রায় দেড়শ ট্রলার নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে। ওসব ট্রলারের কর্মহীন তিন হাজার মাঝি-মাল্লা নানা অভাব অনটনের মধ্যেও অলস সময় পার করছেন।
একই অবস্থা পাঁচকপাট, মনপুরার জনতা, দৌলতখান ও তজুমদ্দিন ঘাটের ৬৪ হাজার সমুদ্রগামী জেলেদের।
৬৭ ইউনিয়নের জেলেরা পাননি সহায়তার চাল
নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন জেলেদের খাদ্য সহায়তার জন্য সরকার প্রথম কিস্তিতে ৪২ দিনের সাড়ে তিন হাজার মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে গত ২২ মে উপজেলা পর্যায়ে চাল ছাড় করা হয়। ৪ জুনের মধ্যে তা বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়।
সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে এখন পর্যন্ত জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ১১টি ইউনিয়নে চাল বিতরণ কার্যক্রম চললেও রহস্যজনক কারণে বাকি ৬৭ ইউনিয়নে চাল বিতরণ হচ্ছে না। সুবিধা বঞ্চিত জেলেরা দ্রুত এসব চাল বিতরণের দাবি জানিয়েছেন।
যা বলছেন জেলেরা
চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন সুবিধাবঞ্চিত জেলেরা। তাদের দাবি স্বজনপ্রীতি করা হচ্ছে; দলীয় লোকরা পাচ্ছেন সহায়তার চাল, বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জেলেরা।
মাছ ধরার সরঞ্জাম মেরামত করে সময় পার করছেন নিষেধাজ্ঞায় থাকা জেলেরা। ছবি: সময় সংবাদ
সামরাজ ঘাটের জেলে তরিক পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কখন চাল দেয় তা জানতে পারি না। প্রকৃত জেলেদের চাল না দিয়ে অন্য পেশার হলেও স্বজন আর দলীয় লোকদের মধ্যে কিছু চাল বিতরণ করা হয়। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় সহায়তা কখনো ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে চলতে হয়।’
রফিজল হক বলেন, ‘সঠিক সময়ে জেলেরা খাদ্য সহায়তা পেলে আমাদের কষ্ট করতে হয় না। আমরা দ্রুততম সময়ে খাদ্য সহায়তা চাই।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যাতে কষ্টে না পড়েন, সে জন্যই খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘সহায়তার বরাদ্দ এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ছাড় দেয়া হয়েছে। জেলেদের সাগরে যাওয়া বন্ধ রাখার পাশাপাশি শিগগিরই সহায়তার চাল বিতরণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
সরকারি হিসাবে জেলায় এক লাখ ৫৯ হাজার নিবন্ধিত জেলের মধ্যে সমুদ্রে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন। নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন এসব পরিবারকে মোট ৮৬ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। প্রথম কিস্তিতে ৪২ দিনের জন্য পরিবার প্রতি ৫৬ কেজি করে জেলায় মোট তিন হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।