৫৪৬ রানে আফগানিস্তানকে হারালো বাংলাদেশ। এক কথায় বলতে গেলে মধুর প্রতিশোধ। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে আফগানদের বিপক্ষে ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা। চার বছর পর তাদেরই গুঁড়িয়ে টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে লিটন দাসের দল। রানের হিসাবে টেস্ট ইতিহাসের ১৪৬ বছরে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়। ১১২ বছর ধরে তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ১৯১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৩০ রানে হারিয়েছিল তারা। অজিদের সেই রেকর্ড পেছনে ফেলে রেকর্ড বইয়ে অনন্য স্থান দখন করে নিয়েছে টাইগাররা। বলার অপেক্ষা রাখে না এই শতাব্দীতে ৫০০ রানের জয়ের কোনো রেকর্ড ছিল না। ১৯৩৪-এ অস্ট্রেলিয়া ৫৬২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল।
আর এর আগের জয়টি ছিল ১৯২৮ এ ৬৭৫ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। এটি লাল বলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান ব্যবধানে জয়। এ জয়ে দারুণ অবদান নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক সৌরভ আর পেসার তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন চৌধুরীদের। জয়ের পর অধিনায়কের কণ্ঠে ঝরেছে দারুণ প্রশংসা। রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২২৬ রানের, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫-এ চট্টগ্রামে।
মিরপুর স্টেডিয়ামের ম্যাচটি একতরফা হলেও শেষ মুহূর্তে গড়ে উঠেছিল দারুণ নাটকীয়তা। তাসকিনের এক ওভারে দুইবার বেঁচে যান আফগান ব্যাটার জহির খান। প্রথমে জহির খানকে কট-বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার, তাসকিন ছুঁয়ে ছিলেন ৫ উইকেট। মাটিতে সিজদাও দিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু রিভিউ নিয়ে রক্ষা পান জহির। পরের বলে তাসকিন দেন স্টাম্প ভেঙে। তবে এবার নো বলের কবলে পড়ে জয় উদ্যাপন দীর্ঘায়িত হয়। জয় নিশ্চিত হয়েই ছিল, শুধুই বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। অপেক্ষা ছিল কত আগে সেই জয় ধরা দেয়। অপেক্ষা অবশ্য বেশিক্ষণ করতে হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাহুতে বলের আঘাতে ‘রিটায়ার্ড আউট’Ñ হন জহির। আফগানদের অলআউট করতে প্রথম সেশনও লাগেনি। ২২ ওভারে শেষ ৮ উইকেট হারায় সফরকারীরা। তাদের ইনিংস শেষ হয় ৩৩ ওভারে মোটে ১১৫ রানে। ২ উইকেটে ৪৬ রান নিয়ে গতকাল চতুর্থ দিন শুরু করে আফগানিস্তান। কিন্তু দাঁড়াতেই পারেনি তারা। টাইগার পেসারদের দাপটে প্রতিনিয়ত ধুঁকেছে তারা। ৬৬২ রানের ‘অসম্ভব’ লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি সফরকারীরা। এর আগে প্রথম ইনিংসে করতে পেরেছিল কেবল ১৪৬ রান।
গতকাল প্রথম সেশনে মাত্র ৩ রান যোগ করতেই তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানিস্তান। জামাল নাসিরকে সাজঘরে ফেরান ইবাদত হোসেন। এরপর আফসার জাজাইকে নিজের শিকার বানান শরীফুল ইসলাম। জামাল ও জাজাই দু’জনেই আউট হন ৬ রান করে। এরপর তাসকিনের আঘাত, ফেরেন উইকেটে মানিয়ে নেয়া আফগান ব্যাটার রহমত শাহ। ৩০ রান করা রহমতকে লিটন দাসের ক্যাচ বানান তাসকিন। আর দলীয় ৯৮ রানে করিম জানাতের উইকেট ভাঙেন এই পেসার। এরপর আর ১৭ রান যোগ করে আফগানিস্তান দল। বলার মতো রান পায়নি আর কেউ। পারেনি দুই অংকের ঘর স্পর্শ করতে। প্রথম ইনিংসে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা তাসকিন এই ইনিংসে শিকার করেন ৪ উইকেট। ৩টি উইকেট যায় শরীফুলের ঝুলিতে। অন্য দু’টি মিরাজ ও ইবাদতের। মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা নিয়েছেন ১৪ উইকেট। যা এই ফরম্যাটে এক ম্যাচে তাদের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ উইকেট।
অবশ্য এই জয়ের ভিত গড়া হয়ে যায় আগের তিনদিনেই। মিরপুরে নিজেদের প্রথম ইনিংস থেকে বাংলাদেশ দল লিড পায় ২৩৬ রানের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর ১৪৬ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তান গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে। ফলোঅন করানোর সুযোগ থাকলেও স্বাগতিকরাই দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নামে। এবার টাইগাররা ছাপিয়ে যায় নিজেদের আগের ইনিংসকেও। জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকান মুমিনুল হক ও শান্ত। ফিফটি করেন জাকির হাসান ও লিটন দাস। ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের লিড দাঁড়ায় ৬৬২ রানের। এই ম্যাচে দেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে জোড়া সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১২৪ রান।