আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে কিশোরীর মামলা
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা এক কিশোরীর মামলা নিয়ে উত্তাল টাঙ্গাইলের রাজনীতি। চা স্টল থেকে হাট বাজার সব জায়গাতেই এ মামলা নিয়ে আলোচনার তুঙ্গে। নিজ এলাকা গোপালপুরেও চলছে নানা আলোচনা। মামলার পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরছে মনির বিরোধী ও অনুসারীদের মধ্যে। এদিকে মামলার এজাহারে ধর্ষণের যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে সে অনুযায়ী কিশোরী ধর্ষণ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে।
কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই কিশোরী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, মামলায় ধর্ষণের তারিখ উল্লেখ করার প্রায় আড়াই মাস আগে কিভাবে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত বড় মনির সমর্থকেরাও প্রশ্ন তুলেছে। সেই সাথে এ মামলাকে মিথ্যা ও রাজনৈতিক অপচেষ্টা বলে জানিয়েছে বড় মনি। অন্যদিকে মামলায় উল্লেখ করা ঘটনার তারিখে বড় মনি টাঙ্গাইলের বাইরে ছিলো বলে মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়।
মামলায় ওই কিশোরী উল্লেখ করেছেন, বড় মনি তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত। হোয়াটস অ্যাপে তাদের কথা হতো।
ওই কিশোরীর ভাইয়ের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হয়। ওই কথা গোলাম কিবরিয়া জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে গত ১৭ই ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় বড় মনির নিজের বাড়ির পাশে একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলা ফ্লাটে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন।
প্রায় তিন ঘন্টা পর কক্ষে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে কারো কাছে এই ঘটনা প্রকাশ করতে নিষেধ করেন। তা প্রকাশ করলে প্রাণ মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন। তারপর প্রতিনিয়ত তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং প্রথমবার ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখি প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতো। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, এই ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়াকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন।
মামলার পর গত বুধবার ওই কিশোরীর বড় ভাই জিয়াউল হাসান জনি টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন- তার বোন মাদকাসক্ত হয়ে একটি পরিবারকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার বাবা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। আমার ছোট বোন শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া লেখার সময় বিভিন্ন নেশায় আশক্ত হয়ে পড়ে। নেশার টাকা পরিবার থেকে না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দিতো। পরিবার বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দিতো। এসময় সে চারিত্রিকভাবে নষ্ট হয়ে যায়। উঠতি বয়সের ছেলেদের সাথে অবৈধ মেলামেশা করতো। প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে মামলার হুমকি দিতো।
এর আগেও শহরের থানা পাড়ার এক ছেলেকে বিয়ে করেছিলো। সম্প্রতি সময়ে যার বিরুদ্ধে সে ধর্ষণের মামলা করেছে সে আমাদের ফুপা লাগে। টাকার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। পাঁচ মাস আগে আমার বোন সোনিয়া ক্লিনিকে পরীক্ষা করেছিলো। সেখানে তার গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপরদিকে আদালত থেকে ফুপুর জিম্মায় আমার বোনকে দেয়া হয়েছে, সে আমাদের আসল ফুপু নয়। সে আমাদের প্রতিবেশি ফুপু। ওই ফুপুর বাসা ফাঁকা থাকে। সেখানে অনেক ছেলে মেয়ে অনৈতিক কার্যক্রম করে থাকে। আমার বোন মাদকাসক্ত হয়ে একটি পরিবারকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে।
এদিকে ওই কিশোরীকে নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কিশোরী একটি হোটেলে নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকে স্বামী বলে পরিচয় দেয়।
অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনি বলেন, মিথ্যা এবং রাজনৈতিকভাবে আমাদের চরিত্র হরণ করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মামলায় উল্লেখ করা ঘটনার দিন আমি টাঙ্গাইলের বাইরে একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। ওই মেয়েটি নেশাগ্রস্ত। সে ব্লাকমেইল করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মেয়েটির ভাই তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার ছোট ভাই সংসদ সদস্য। তিনি যেন মনোনয়ন না পায় সে ব্যাপারেও একটি পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এসব ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করছি। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, প্রাথমকি আলামতে ওই কিশোরীর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই কিশোরীর ২৪ সপ্তাহের বেশি (ছয় মাস) অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। পরে রিপোর্টটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই কিশোরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, বিষয়টি তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেডিকেল রিপোর্টটি হাসপাতাল থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসেছে।