ময়মনসিংহের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশ ও মানুষের উন্নয়ন হয়। বিএনপি তো এতিমদের টাকা মেরে খায়। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলমান। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াই তারা এসে কমায়। আমরা প্রতিটি ঘর আলোকিত করতে চাই। আমরা যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম তাহলে তারা এতকিছু বলতে পারতো না। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। তা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার। গতকাল বিকালে ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
এদিন তিনি ময়মনসিংহের শতাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আল্লাহ্র রহমতে এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই। এক কোটি মানুষকে আমরা মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারার সুযোগ করে দিয়েছি। অনেককে ১০ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আবার যাদের একেবারে সামর্থ্য নেই তাদের বিনামূল্যে চাল দেয়া হচ্ছে। আমরা চাই কোনো মানুষ কষ্ট না পাক।
বেলা আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার নগরীর রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। প্রায় ৪ বছর পর ময়মনসিংহে আসেন তিনি। বেলা ২টা ৫০ মিনিটে সমাবেশের মঞ্চে ওঠেন শেখ হাসিনা। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে বিকাল ৩টার দিকে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের শুরুতে নেতাকর্মীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। এ সময় তিনি বলেন, তিন বছর সাত মাস তিনদিন জাতির পিতা দেশ গড়ার সময় পেয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজ করেন। সংবিধান প্রণয়ন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার তা বাস্তবায়ন করা। আমি আপনাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। উদ্বোধন করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার মাসে ৭৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করে দিয়ে গেলাম, সেগুলো যত্নে রাখবেন। এরপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ৩০টি প্রকল্প পড়ে শোনান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ময়মনসিংহ বিভাগ করে দিয়েছি। প্রতিটি বিভাগের মতো এ বিভাগে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে, একটি পৃথক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবো। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অনেক কিছু সম্ভব হয়নি।
বিরোধীরা মিথ্যাচারে কোনো সুফল পাবে না উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তারা তা পারবে না। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। শেখ হাসিনা বলেন, এই স্বাধীনতা আমরা লাখো শহীদের রক্তে পেয়েছি। এই স্বাধীনতা কোনো মতে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না। জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি মানুষের ঘর দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গৃহহীন ও রাস্তায় মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ্ বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা আজকে প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে বিদ্যুৎ নাই আমরা সোলার প্যানেল করে দিচ্ছি। অনেক দুর্গম এলাকায়ও সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুনেছি, বিএনপি’র কোনো এক নেতা আছে নাকি সারাদিন মাইক নিয়ে বসে থাকে। তারা নাকি বলে, আমরা নাকি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি। আচ্ছা ময়মনসিংহবাসী আপনারাই বলুন, আমরা কি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি? শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নাকি কিছুই পারি নাই? আজকে যে বাংলাদেশটা ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদলতে তো এখন দূরে বসেও দেশের মানুষের কথাও বলে, রাজনীতিও করে, সবই করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। আমরা নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ২০৪১ সালে আমাদের জনগোষ্ঠী স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদের গ্রাম, কৃষি সবকিছু হবে স্মার্ট। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন করা। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২১০০ সালের মধ্য ডেল্টা প্ল্যান করে এই ভূখণ্ড আরও উন্নত করবো। তিনি বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করে এই সভায় এসেছেন। আপনারা এই সভাকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন। আপনাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ‘রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আমরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখনও ২৬ লাখ টন খাদ্য মজুত রেখে গেছি। ২০০১ সালে এলো লুটেরা একদল, সন্ত্রাসীর দল বিএনপি। তারা আবার বাংলাদেশকে খাদ্যে ঘাটতির দেশে পরিণত করে। ২০০৯ সালে আবার যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখি আবার সেই ২৬ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি। আল্লাহ্র রহমতে দেশে এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই। ২১ লাখ টন খাদ্য এখন মজুত আছে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, মীর্জা আজম, সদস্য মারুফা আখতার পপি, সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত প্রমুখ।
৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন: ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে পৌঁছে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। প্রকল্প উদ্বোধন শেষে মোনাজাত করা হয়। যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে- তিনটি ব্রিজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি হল, আনন্দ মোহন কলেজে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট পাঁচতলা ছাত্র হোস্টেল ভবন, সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ উল্লেখযোগ্য। ৩০ প্রকল্পের মধ্যে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ১৩টি, গণপূর্ত অধিদপ্তর পাঁচটি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি করে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দু’টি এবং জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ৩০টি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭৬২ কোটি ২৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
৭৩টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, পাঁচটি ব্রিজ, সদর উপজেলার সিরতা গ্রামে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল কমপ্লেক্স, ছয়তলা ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার সড়ক, ড্রেন, সড়ক বাতি স্থাপন, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, গোবরাকড়া কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন, শেখ কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম উল্লেখযোগ্য। ৭৩টি প্রকল্পের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩১টি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২১টি, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন চারটি করে, গণপূর্ত অধিদপ্তর তিনটি, জেলা পরিষদ ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলা দু’টি করে এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতি একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৫৭০ কোটি ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা।
গণতন্ত্রকে নষ্ট করেছে বিএনপি- ওবায়দুল কাদের: এদিকে জনসমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণতন্ত্রকে নষ্ট করেছে বিএনপি। আর তা মেরামত করেছেন শেখ হাসিনা। বিএনপি দেশের কোনো উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না। ‘এদেশের উন্নয়ন বিএনপি’র সহ্য হয় না। ধানের শীষের আরেক নাম ছিল পেটের বিষ, এখন মানুষ একে বলে সাপের বিষ।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি এতদিন দৌড়াতে দৌড়াতে এখন একেবারে দাঁড়িয়ে গেছে মানবন্ধনে। কী দুরবস্থা। তাদের শক্তি কমে গেছে, কিন্তু মুখের বিষ কমেনি। আরও উগ্র হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিএনপি নেতারা গালিগালাজ করে আশ্রাব্য ভাষায়। দেশের জন্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে তারা জ্বালায় জ্বলছে, তারা এখন দিশাহারা।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, অন্তর জ্বালায় মরে বিএনপি, কি করে পদ্মা সেতু মেট্রোরেল এত উন্নয়ন হলো। আজকে জ্বালা আর জ্বালা। মানুষের চোখ জুড়িয়ে যায়, কিন্তু বিএনপি’র জ্বালা, বুকের ব্যথা বাড়ে। আপনারা ঠিক আছেন? খেলা তাহলে হবে। খেলা হবে জোরদার খেলা হবে। আন্দোলনে খেলা হবে, নির্বাচনে হবে। দুর্নীতিবাজ, অর্থচুরি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।