হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে প্রতিযোগীদের থেকে বহু এগিয়ে রাশিয়া। এতদিন কাগজে কলমে বিষয়টি জানা থাকলেও এবার তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। ইউক্রেনে একদিনে ৬টি হাইপারসনিক মিসাইল ছুঁড়ে নিজের সক্ষমতার কথা জানান দিয়েছে মস্কো। এই মিসাইল ঠেকানোর মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পশ্চিমাদের কাছে নেই। রাশিয়া বৃহস্পতিবার ৮০টিরও বেশি মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনে, যার মধ্যে ছিল ওই হাইপারসনিক মিসাইলগুলোও। সবগুলিই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, হাইপারসনিক মিসাইলগুলি শব্দেরও কয়েক গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে। আর দ্রুতগামি মিসাইলের ক্ষেত্রে বিশ্বে রাশিয়ার আশেপাশে কেউ নেই। রাশিয়ার এমনই এক হাইপারসনিক মিসাইল ‘কিনঝাল’ যার অর্থ হচ্ছে ছুরি। এটিকে ঠেকানোর মতো কোনো ‘জবাব’ ইউক্রেন বা তার মিত্রদের কাছে নেই।
কাগজে কলমে যেই মিসাইলের গতি শব্দের গতি পাঁচগুণ সেটিই হাইপারসনিক মিসাইল। তবে কিনঝালের গতি এরও দ্বিগুন।
কিনঝাল ছুটতে পারে শব্দের ১০ গুণ বেশি গতিতে। সাধারণ হাইপারসনিক মিসাইলের গতি ঘণ্টায় ৬ হাজার ২০০ কিলোমিটার, আর কিনঝালের গতি ঘণ্টায় ১২ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার। এই গতির মিসাইলকে পৃথিবীর কোনো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ঠেকানো সম্ভব নয়। ফলে একবার আকাশে উড়লে এর থেকে টার্গেটের নিস্তার নেই।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত দুই ধরণের হাইপারসনিক মিসাইল আবিষ্কৃত হয়েছে। একটি হচ্ছে ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল’। এই মিসাইলগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বাইরে চলে যেতে পারে। হাজার হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে এরপর সেটি আবার পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে এবং টার্গেটে আঘাত হানে। উত্তর কোরিয়া এ ধরণের মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে সম্প্রতি। আর দ্বিতীয় ধরণের মিসাইল হচ্ছে ‘হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল’। এগুলো একেবারে নিচু দিয়ে উড়ে যায়। এগুলোর গতি হয় অস্বাভাবিক রকমের বেশি। ফলে শত্রুদের মিসাইল ঠেকানোর কোনো সুযোগই থাকে না। এসব মিসাইল পরমাণু বোমাও পরিবহণ করতে পারে।
রাশিয়া যে কিনঝাল মিসাইল ছুঁড়েছে সেগুলোও পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে। এর রেঞ্জ ১৫০০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার। এটি ৪৮০ কেজির বিস্ফোরক বহন করতে পারে। এটির সর্বোচ্চ গতি ১০ ম্যাক বা শব্দের গতির ১০ গুণ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছেন, রাশিয়া হাইপারসনিক মিসাইল প্রযুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। এসব মিসাইলের গতি, নির্ভুলতা এবং উচ্চতার কারণে এগুলোকে শনাক্ত এবং ধ্বংস করা অসম্ভব। ২০২২ সালের মার্চ মাসেই রাশিয়া হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করেছিল। তবে এতদিন এর খুব বেশি ব্যবহার দেখা যায়নি। এবারই একসঙ্গে এতগুলো হাইপারসনিক মিসাইল হামলা চালালো মস্কো।
হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে রাশিয়াকে ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রও। তারাও এরইমধ্যে হাইপারসনিক প্রযুক্তি ডেভেলপ করেছে। যদিও মার্কিন হাইপারসনিক অস্ত্রের গতি এখনও ৫ ম্যাকে আটকে আছে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেয়। এছাড়া চীনও এই প্রযুক্তি নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইরান, ইসরাইল, দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়াও এই প্রযুক্তি বাগে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা জারি রেখেছে।