সীতাকুণ্ড টু গুলিস্তান। সিরিজ বিস্ফোরণ। একের পর এক মৃত্যু। লাশের মিছিল। ছেলে হারা মায়ের কান্না। ভাই হারা বোনের আহাজারি। সেকেন্ড, মিনিটে জীবনের গল্প বদলে যাওয়া। মানুষটি হঠাৎই নতুন নাম পায় লাশ। একটি পরিবার, একটি সংসারে নেমে আসে দুর্যোগ। এবারের সিরিজ বিস্ফোরণের শুরুটা সীতাকুণ্ডে।
সেখানে লাশের হিসাব মেলাতে না মেলাতেই মৃত্যু হানা দেয় ঢাকার সাইন্সল্যাবে। এখানে ভবনে বিস্ফোরণকে এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনাই বলা হচ্ছে। এ আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ আঘাত হানে গুলিস্তানে সাত তলা ভবনে। কীভাবে এ বিস্ফোরণ তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে চলছে তদন্ত। নাশকতা কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে একের পর এক বিস্ফোরণে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
গুলিস্তান বিস্ফোরণে এরই মধ্যে জীবনের নানা মর্মস্তুদ গল্প সামনে এসেছে। সহকর্মীদের বরাতে মানবজমিন-এ ই পড়ছিলাম সুমনের জীবনের কাহিনী। মা পবিত্র শবেবরাতের রোজা রেখেছেন। এজন্য ছেলে সুমন ইফতারি কিনতে বাইরে যান। কিন্তু হঠাৎই সবকিছু থমকে যায়। মায়ের জন্য ইফতারি কেনা হলো না সুমনের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিহত সুমনের প্রতিবেশী বিলকিস জানান, কাতার প্রবাসী সুমন। বিয়ের জন্য ১০-১২ দিন হয়েছে ঢাকা এসেছেন। সোমবার পাত্রীও দেখেছেন। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার প্রক্রিয়াও চলছিলো। কিন্তু আজই তার মৃত্যু হয়। বিলকিস বলেন, বিস্ফোরণের কারণে সুমনের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। ডাক্তার বলছে সে মারা গেছে।
গুলিস্তান বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন র্যাব মহাপরিচালক। র্যাব ডিজি এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ‘সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সন্দেহ থাকতেই পারে। এগুলো দুর্ঘটনা কিনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের র্যাব গোয়েন্দো দল কাজ করছে। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা বলা যাবে।’ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাজধানীর গুলিস্তানের বিআরটিসি কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। (সূত্রঃ সমকাল)
ওদিকে, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলছেন, বাংলাদেশের রাজধানী এখন ‘বিস্ফোরণোন্মুখ’ হয়ে আছে। অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজের কাছে তিন এ মন্তব্য করেন। কেন একথা বলছেন, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ঢাকা শহর গড়ে তোলা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এখানে ভূগর্ভস্থ পয়ঃবর্জ্য লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাসের লাইন- কোনটা কোনদিক দিয়ে গেছে তা কারও জানা নেই। যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ মুহূর্তে বড় ভূমিকম্প হলে অর্ধেক মানুষই পুড়ে মারা যাবে। এটার মূল কারণ ‘ম্যাপিং’ নেই।”
শেষ কথা: রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সময় লাশের লাথির কথা লিখেছিলাম। কিন্তু আমাদের হুঁশ যে হয়নি একের পর এক লাশের মিছিল তার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে মানুষ। আমরা বসে বসে দেখছি। যেন কারওই কিছু করার নেই। কবে যে হুঁশ ফিরবে আমাদের। নাকি আদৌ কোনো দিন ফিরবে না!