সকালের সূর্য যদি দিনটা কেমন যাবে তার ইঙ্গিতবাহী হয়, তাহলে এই কথা বলতে দ্বিধা থাকা উচিত নয় যে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিই কাণ্ডারি হচ্ছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষক বিজেপিকে লোকে যতই ঘৃণা করুক, নরেন্দ্র মোদিকে তারা ততটাই পছন্দ করেন। তাই, উত্তর পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যের নির্বাচনে জিতে বিজেপি সরকার গড়ছে জোট সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে। সারা বিশ্বজুড়ে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা ৬৭ শতাংশ বলে নয়, তিন রাজ্যের নির্বাচনেই ভোটাররা মোদির ইমেজকে সামনে রেখেই ভোট দিয়েছেন। মোদি এই সাফল্যের পর যতই বলুন- বিজেপির স্থায়িত্ব আর উন্নয়নের জয় হয়েছে, কিন্তু আসল জয় নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি নামক এক ব্যক্তির। ব্যক্তি যখন সমষ্টির ঊর্ধ্বে চলে যায়, তখন তার কিছু কুফল আছে, কিন্তু আপাতত বিজয় সিংহাসনে মোদিই, বিজেপি নয়। সেই কারণে তিন রাজ্যে ভোটের ফলাফলের পর মোদি বলেন- ওরা বলছে, মোদি তু মর যা, দেশবাসী বলছে, মোদি তু মাত যা। এর থেকে বড় কথা আর কী হতে পারে!
ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ড বিজেপির পকেটে এসেছিলো বৃহস্পতিবারই। মেঘালয় বিধানসভা ত্রিশঙ্কু ছিল। এদিনই গভীর রাতে মেঘালয়ের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ও পিপিপি দলের নেতা কনরাড সংমা দিল্লিতে অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করেন।
এরপর গভীর রাতে মেঘালয়ের বিজেপি সভাপতি আরনেস্ট মানিমে ঘোষণা করেন বিজেপি মেঘালয়ে পিপিপিকে সমর্থন দেবে এবং সরকারে অংশ নেবে। ২০১৮ নির্বাচনে এনপিপি ২০টি আসন পেয়েছিল। এবার তারা ২৬টি আসন পেয়েও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে পারেনি। ভোটের ফল ঘোষণা শুরুর সময় মনে করা হয়েছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস হয়তো কিংমেকার হবে।
কিন্তু ৫৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র পাঁচটিতে জয় তাদের কিংমেকার তো করতেই পারেনি, বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বভারতীয় নেতা হওয়ার স্বপ্নে কুঠার মেরেছে। তৃণমূলের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় ত্রিপুরার ফল। ২৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মমতার দল একটি আসনও পায়নি। বরং মোট প্রাপ্ত ভোট নোটায় পড়া ভোটের থেকেও কম। ত্রিপুরায় বিজেপি ৩২ ও জোটসঙ্গী আইপিটিএফ একটি আসনে জয়ী হয়েছে। টিপরা মোথার প্রধান প্রদ্যুত কিশোর রায় বর্মণ যদিও বিজেপিকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছেন, কিন্তু বিজেপি এই সমর্থন পেলে ভালো, না পেলেও তাদের কিছু আসে যায় না। তাদের জোট গতবার অর্থাৎ পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে ৩৮টি আসন জিতে ক্ষমতায় এলেও এবার ৩৩-এ তারা ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছে। বাম কংগ্রেস জোট পশ্চিমবঙ্গের সাগরদীঘিতে যতটা সফল হয়েছে, ত্রিপুরায় হয়নি। বরং বামেরা (সিপিএম) বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা হারানোর মুখে। তারা সাফল্য পেয়েছে ১৪টি আসনে, টিপরা মোথা ১৩টি আসনে। নাগাল্যান্ডে এনডিপিএফ এবং বিজেপি জোট করেই ভোটে লড়েছিল। ১৭টি থেকে ২৫টি আসনে উঠে এসেছে এনডিপিএফ। এটাও মোদির ক্যারিশমায়।
তিন রাজ্যের বিধানসভা এবং ৬টি উপ-নির্বাচনের আসন মিলিয়ে ১৭৮টি আসনে লড়াই হয় এবার। অর্ধেকের বেশি আসন পেয়েছে আঞ্চলিক দল যার বেশির ভাগেরই সমঝোতা বিজেপির সঙ্গে। হাতে রইলো পেন্সিলের মতো ছটি উপনির্বাচনের তিনটি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে বাকি তিনটি, কিন্তু দখলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর। এরপরও কী বলে দেয়ার অপেক্ষা থাকে যে, নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদিই চব্বিশের নির্বাচনে প্রধান কাণ্ডারি!