চক্রটি উৎসব, মেলাসহ বিভিন্ন জনসমাগম স্থান টার্গেট করে। যে ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাকে আগে থেকে অনুসরণ করে। তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে। এরপর সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে চক্রের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত থাকে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে তার কাছে থাকা জিনিসপত্র ছিনতাই করে। গত রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চক্রের মূলহোতা মোহাব্বত মিয়া ও মো. মাসুম। তাদের সহযোগীরা হলো- ফজল খাঁ,সাইফ, আকাশ, আবু বকর, নজরুল ইসলাম, আলমগীর, মো. জাহাঙ্গীর, সোহেল, মো. সোহেল, সোহানুর রহমান সাগর, মো. মামুন, লিটন, আলমাস, সুজন মিয়া, রাকিব, মো. রিপন, মো. কালাম, নজরুল ইসলাম, সুমন মৃধা, অন্তর হোসেন রবিন, আব্দুল রসুল, মো. কবির, ছামিদুল রহমান (৩৪), ইকবাল হোসেন, কামরুল, শহীদুল ইসলাম উজ্জ্বল, মো. কালু, মো. সুমন, হৃদয় ও সাজিদ খান। এ সময় তাদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার চাকু, ক্ষুর, অ্যান্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তারকৃতদের তৎপরতা বাড়তো।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর লোক সমাগম হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা ছিনতাই করতো। জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি করাই তাদের মূল লক্ষ্য। বেশ কিছুদিন দিন ধরে বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক চক্রটি রাজধানীর কোতোয়ালি, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে চক্রটি। রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল ভোররাত পর্যন্ত ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাসহ মোট ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
তিনি বলেন, সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এ ছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন অলি গলিতে ওতপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, চক্রের সদস্যরা যে সকল ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদেরকে আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে এবং অনুসরণকৃত ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে। একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে ওই ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেখানে ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে আসলে বলে, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এ মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে। এ ছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা বা সিএনজি আরোহী যাত্রীদেরকে টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে উক্ত ব্যক্তির পিছনে যেতে থাকে। ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রী এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পরে এই টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে। এই চক্রের সদস্যদের অধিকাংশেরই রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই। তারা সকলেই রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। প্রায় সকলের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে।