কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত লোকে মনে করতো বৃটেনে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ -ব্রেক্সিট। এখন সেই মেজাজ অবিশ্বাস্যভাবে পরিবর্তন হয়েছে। দেশ এগিয়েছে, পুরনো ক্ষতে প্রলেপ পড়েছে। ট্রাস প্রশাসনের পতন সবকিছু বদলে দিয়েছে, যদিও তার পতনের কারণ সরাসরি ব্রেক্সিটের সাথে সম্পর্কিত ছিল না। ডাউনিং স্ট্রিটে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার সাফল্য এবং সেখানে তার নাটকীয় পতন উভয়ই দেখেছে বৃটেনবাসী। সেপ্টেম্বরে মিনি-বাজেটের পর যে বাজার সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ব্রেক্সিট ব্রিটেন অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর। YouGov-এর একটি জরিপ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে যেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৩২ শতাংশ জনসাধারণ বিশ্বাস করে যে ২০১৬ সালে EU ত্যাগ করার জন্য ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো, যেখানে ৫৬ শতাংশ এটিকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছিল। কিন্তু ৫৬ শতাংশের মধ্যে কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে ” সিদ্ধান্তটি ভুল হলেও আমরা এখন যেখানে আছি সেখানে এই প্রশ্নটি পুনরায় তোলা একটি ভুল হবে।’ এই প্রেক্ষিতে আরো একটি প্রশ্ন উঠছে: “যুক্তরাজ্যের কি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া উচিত নাকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা উচিত?” মে মাস থেকে, ব্রেক্সিটে পুনরায় যোগদান নিয়ে জোর আলোচনা চলছে এবং বর্তমানে জনসাধারণের মতামত ৫৬-৪৪ বিভক্ত। ব্রেক্সিটের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা কনজারভেটিভদের জন্য খুব খারাপ খবর কারণ এই পুরো উদ্যোগটি পার্টির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। কনজেরভেটিভদের জনপ্রিয়তা হারানোর বিষয়টি ব্রেক্সিটের ধারণাকে ধাক্কা দিয়েছিলো কিনা সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
তা সত্ত্বেও, যদি জাতি ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে চলে যায়, টোরিরা তাদের দুটি বৃহত্তম সম্পদের মধ্যে দ্বিতীয়টি গত সাধারণ নির্বাচনে হারাবে (অন্যটি হচ্ছেন জেরেমি করবিন)।
টোরিদের জন্য একটি নির্বাচনী সান্ত্বনা হল যে লেবার পার্টিকে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রাখা গেছে। এর মূল ভোটিং বেস সেই ৫৬ শতাংশ থেকে অপ্রতিরোধ্যভাবে আসবে যারা ইইউতে পুনরায় যোগদানের পক্ষে, তবে পার্টি নেতৃত্ব টোরিসের বিশ্লেষণের সাথে একমত যে আগামী সাধারণ নির্বাচনে মূল ভোটারদের একটি অংশ রক্ষণশীলদের দিকে চলে গেছে। এই ভোটাররা ব্রেক্সিট ত্যাগ করার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে টোরিদের পরিত্যাগ করেছে। কেয়ার স্টারমারের আশঙ্কা, ব্রেক্সিট ফিরে এলে সেই ভোটাররা টোরিদের আরেকটি সুযোগ দিতে পারে। বিবেকবান মন্ত্রীরা জানেন যে ব্রেক্সিট তাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে। তারা ক্রমবর্ধমানভাবে “ব্রেক্সিটের সুবিধা”কে স্বাগত জানাতে মন থেকে প্রস্তুত নয়। কিন্তু তাদের দলের একাংশ যারা ব্রেক্সিটে বিশ্বাসী, তাদের চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা নেই। বিরোধীরা বাস্তবতা জানে কিন্তু বিশ্বাস করে এটাকে কাজে লাগানো যাবে না।
এটা কি সত্যিই টেকসই পন্থা ? আগামী দুই বছরে অফিস ফর বাজেট রেসপন্সিবিলিটি জীবনযাত্রার মানের ৭ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস দিয়েছে এবং OECD এই সপ্তাহে বলেছে যে G20 অর্থনীতির মধ্যে শুধুমাত্র রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাজ্যের চেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবে। দুর্বল অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স এবং ব্রেক্সিটের (এছাড়া জনসংখ্যার ওপর বয়স্ক ভোটারদের মৃত্যুর প্রভাব) মধ্যে একটি যোগসূত্র একে পুনরায় যোগদানের জন্য প্ররোচিত করতে পারে। একটি ইউরোপ-পন্থী দল আছে যারা এই সুযোগটি অবশ্যই কাজে লাগাতে পারে, কিন্তু লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা আবার প্রতিবাদী দলের ভূমিকায় ফিরে এসেছে। পশ্চিম দেশের টার্গেট আসনগুলিতে ইউরোস্কেপ্টিক ভোটাররা এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আলোচনাযোগ্য, অর্থনৈতিক সুবিধাযুক্ত এবং রাজনৈতিকভাবে আরও বাস্তবসম্মত যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে । ইইউ একটি “সুইস-স্টাইল চুক্তি”-র দিকে ঝুঁকবে না। এখানে লেবার পার্টি কী ভূমিকা নেয় সেটাও দেখার। ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে যোগদান লাভজনক হলেও, রাজনৈতিকভাবে বিতর্কের জন্ম দেবে। যুক্তরাজ্যের ইইউতে যোগদানের তাৎক্ষণিক কোনো সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাজ্য দীর্ঘমেয়াদী সদস্যপদ গ্রহণ করবে কিনা সেবিষয়ে EU-ও সন্দিহান। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি অনেক দূরের কথা। কিন্তু ব্রেক্সিটে যদি পুনরায় যোগদানের জন্য সমর্থন বাড়তে থাকে, তাহলে দেশের রাজনীতিবিদদের শেষ পর্যন্ত মানিয়ে নিতে হবে। সামনের দিনগুলিতে হয়তো এর উত্তর মিলতে পারে।