চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পালিত হয়েছে। সকাল ১০:০০ টায় চবি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর চবি শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিনবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, চবি বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ দল), বিভিন্ন বিভাগীয় সভাপতি ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, অফিসার সমিতি, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস), চবি মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহ পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে ভাষা শহীদদের স্মরণে মাননীয় উপাচার্যের নেতৃত্বে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোক র্যালি শুরু হয়ে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। অতঃপর মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বেলা ১১:০০ টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে চবি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। আলোচনা সভায় ‘বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ। আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. শহীদুল ইসলাম।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, একইসাথে বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি প্রদানকারী ত্রিশলক্ষ বীর শহীদদের এবং নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যাদের। তিনি বলেন, ‘একুশ বাঙালি জাতির জাগরণের নাম, আমাদের গর্ব ও অহংকারের প্রতীক। বাঙালি জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব রক্ষার প্রথম সংগ্রাম। ৫২’ এর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ধারাবাহিক সংগ্রামের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি খুঁজে পায় স্বাধীনতার স্বাদ’। মাননীয় উপাচার্য বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাঙালিরাই নিজেদের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিল। তাদের সে ত্যাগ বৃথা যায়নি। আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, বিশ^দরবারে বাংলা ভাষার অবস্থান অধিকতর সুদৃঢ় করতে হলে প্রজন্মের সন্তানদের বাংলা ভাষার এ গৌরবের ইতিহাস ধারণ, লালন ও চর্চার মাধ্যমে দেশপ্রেমিক সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ দানেশ মিয়া, আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হক, চবি অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মুহাম্মদ হামিদ হাসান নোমানী, চবি কর্মচারী সমিতির সভাপতি জনাব মোঃ সুমন মামুন ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ আলী হোছাইন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবুদ দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন চবি সংস্কৃত বিভাগের সভাপতি জনাব রাজপতি দাশ, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব অরূপ বড়ুয়া ও পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি আধুুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জনাব জেসী ডেইজী মারাক। অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, চবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। বেলা ১১:৩০ টায় চবি কেন্দ্রীয় মন্দিরে ভাষাশহীদ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আত্মার চিরশান্তি এবং দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও মঙ্গল কামনায় গীতাপাঠ অনুষ্ঠিত হয়। চবি প্রশাসনিক ভবন ও হলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।