১৮ রানে ৭ উইকেট- স্বাগতিক দলকে সমর্থন দিতে আসা দর্শকেরা তখন স্তব্ধ। তখন বিপিএল’র সব আসর মিলিয়ে সর্বনিম্ন দলীয় রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। শেষ পর্যন্ত দুই পেসার তানজিম আহমেদ সাকিব ও মাশরাফি বিন মুর্তজার ব্যাট হাতে লড়াইয়ে সেই বিপদ কেটে যায়। অলআউটও হয়নি দল। তবে মামুলি পুঁজি নিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি দলটির। গতকাল চলতি বিপিএল’র সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে মাশরাফির দলকে ৬ উইকেটে হারায় রংপুর রাইডার্স। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ৯৩ রানের টার্গেটে ২৬ বল বাকি রেখেই জয় নিশ্চিত করে নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন দলটি। এদিন বল হাতে বিধ্বংসী রূপ দেখান হাসান মাহমুদ ও আফগান পেসার আজমতউল্লাহ উমরজাই। দুজনেই নেন দুটি করে উইকেট। জবাবে স্বদেশি ওপেনার রনি তালুকদারের হার না মানা ৪১ রানের ইনিংসে ভর করে সহজেই লক্ষ্যপূরণ করে রংপুর রাইডার্স।
আসরের ৮ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। গতকাল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ৭ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের পয়েন্টও ছিল ১২। রংপুর রাইডার্সের সংগ্রহ দাঁড়ালো ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট। গতকাল সিলেট পর্বের প্রথম দিনে ম্যাচ শুরুর অনেক আগে থেকেই মাঠের সামনে ছিল ভীড়। দর্শকে ঠাসা মাঠে গ্যালারির রঙও বদলে গেল। প্রচুর দর্শকের গায়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সি! বিপিএলে এমন কিছু আগে কখনও দেখা যায়নি কোনো মাঠেই। দর্শকদের হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড। কণ্ঠে চিৎকার আর স্লোগান। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পর আস্তে আস্তে ভাটা পড়ে যায় সেই আবহে। সিলেটের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হয় দ্রুতই। উইকেট একটু মন্থর। অসমান বাউন্সও ছিল। তবে এতটা ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের মতো নয় অবশ্যই। নতুন বলে রংপুরের দারুণ বোলিং আর সিলেটের ব্যাটসম্যানদের খামখেয়ালিতেই এই দশা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটের ইনিংস শুরু হয় নতুন উদ্বোধনী জুটিতে। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে নামেন টম মুরস। দ্বিতীয় ওভারে মুরসকে দিয়েই উইকেট পতনের শুরু। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে আলগা শটে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে অফস্পিনার শেখ মেহেদী হাসানকে দারুণ এক শটে ছক্কা মেরে পরের বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টা করেন শান্ত। কিন্তু লং অফ সীমানায় দুর্দান্ত ক্যাচ নেন শোয়েব মালিক। সিলেট বড় ধাক্কা খায় পরের ওভারে। ওমারজাইয়ের টানা দুই বলে আউট তৌহিদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহীম। বাতাসে ভেতরে ঢোকা ফুল টসে এলবিডব্লিউ হন হৃদয়। তীক্ষ্ণভাবে ভেতরে ঢোকা বলে উড়ে যায় মুশফিকের বেলস। পরের ওভারে মেহেদীর বলে জাকিরকে দারুণ ক্ষীপ্রতায় স্টাম্পিং করেন নুরুল হাসান সোহান। এই তিন ব্যাটসম্যানই রানের দেখা পাননি। জাকির ও মুশফিক শূন্য রানে ফিরলেন টানা দুই ম্যাচে। আর অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকের দুটিই ‘গোল্ডেন ডাক’। ১২ রানে তখন নেই সিলেটের ৫ উইকেট। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে কোনো দল এত কম রানে প্রথম ৫ উইকেট হারায়নি। একটু পর যখন দুই অলরাউন্ডার পাকিস্তান তারকা ইমাদ ওয়াসিম ও লঙ্কান স্টার থিসারা পেরেরাও বিদায় নিলেন, সিলেটের সামনে তখন বিব্রতকর এক রেকর্ডের শঙ্কা। বিপিএলে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড ২০১৬ সালে খুলনা টাইটান্সের ৪৪। সিলেট স্ট্রাইকার্স ১৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন গভীর শঙ্কায়। তবে তানজিম ও মাশরাফি মুখ রক্ষা করেন দলের। আগের ম্যাচে বিপিএল অভিষেকে ৩ উইকেট শিকারি তানজিম এ দিন নিজের ব্যাটিং প্রতিভার ঝলক দেখান। হারিস রউফের বলে দুটি চার মারেন তিনি সোজা ব্যাটে ও ফ্লিক করে। রউফের বাউন্সার তার হেলমেটে লাগলেও ভড়কে না গিয়ে পরের বলেও শর্ট বল পেয়ে চালিয়ে দেন, আবার চার পান ব্যাটের কানায় লেগে। পরে দারুণ একটি ছক্কা মারেন রবিউল হককে। আরেক পাশে মাশরাফি সাবধানী শুরুর পর টানা দুটি ছক্কা মারেন মোহাম্মদ নাওয়াজকে। তানজিম পরে ছক্কা-চার মারেন ওমারজাইকেও। ৪৮ রানের জুটি ভাঙে মাশরাফির বিদায়ে। ২১ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন সিলেট অধিনায়ক। তানজিম আরেকটু টেনে নেন দলকে। আগের ১৫ ম্যাচ মিলিয়ে তার রান ছিল সাকুল্যে ২৩। এ দিন করেন ৩৬ বলে ৪১ রান।