চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও ফরচুন বরিশাল নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরেছে সিলেটের বিপক্ষে। কিন্তু পরের ম্যাচেই দু’দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। খুলনাকে হারিয়ে জয়ে ফিরেছে চ্যালেঞ্জার্স। অন্যদিকে কাগজে কলমে আসরের শক্তিশালী দল রংপুর রাইডার্সকে হারিয়েছে বরিশাল। ২ পয়েন্ট নিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম। আজ সাগরিকা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দু’দল। শক্তি ও তারকার দিক থেকে এগিয়ে ফরচুন বরিশাল। তাদের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। একাই যে কোনো ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। আর চ্যালেঞ্জার্সের শক্তি দেশি-বিদেশি তরুণ প্রতিভাবান আনকোড়া ক্রিকেটাররা।
বিপিএলের এই আসরে দলটির পাকিস্তানি ক্রিকেটার উসমান খান সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জানান দিয়েছেন তাদের সক্ষমতার। দলটির কোচ জুলিয়েন উড আত্মবিশ্বাসী এই তারুণ্যের শক্তি দিয়েই সাকিবদের হারাতে। নিজেদের ঘরের মাঠে জয় দিয়েই শুরু করতে চান তারা। কোচ বলেন, ‘আমাদের দলে হয়তো বড় তারকা নেই। কিন্তু এক ঝাঁক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। আর টি-টোয়েন্টিতে দল হিসেবে খেলাটা অনেক বড় বিষয়। আমরা একটি ইউনিট হিসেবে খেলতে চাই। প্রথম ম্যাচ হারলেও আমরা কিন্তু পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। দলে পাওয়ার হিটার ও দারুণ কৌশলি কিছু ব্যাটার আছে। আবার তরুণ ও অভিজ্ঞ মিলিয়ে আমাদের বোলিং ইউনিটটাও দারুণ। সাকিব বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাদের একজন। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এককভাবে বড় কিছু করা বেশ কঠিন! এখানে আমাদের চারটি ম্যাচ। আমরা একটি একটি করে ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা করেছি।’
অন্যদিকে জয়ে ফিরে উজ্জীবিত ফরচুন বরিশালের তারকা বোলার ইবাদত হোসেন চৌধুরী। জাতীয় দলে নিজেকে দারুণভাবে প্রমাণ করেছেন এ পেসার। যদিও নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভালো বল করতে পারেননি। চট্টগ্রামের উইকেট বরাবরই ব্যাটিং সহায়ক। বোলারদের দিতে হয় কঠিন পরীক্ষা। এমন উইকেটে বুদ্ধি দিয়ে বল করার কথা বলছেন ফরচুন বরিশালের পেসার ইবাদত হোসেন। তিনি মনে করেন, এমন উইকেটে খেললে বোলারদের স্কিলেও উন্নতি আসে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের উইকেট সবসময় ব্যাটিং সহায়ক হয়, এটা আমরা সবাই জানি। পেস বোলারের স্কিল বাড়াতে হবে। বুদ্ধি দিয়ে বল করতে হবে। ভালো উইকেটে খেলা হলে যে পেস বোলারের স্কিল যত ভালো, সে সেখানে ততো ভালো বোলিং করবে।’ মিরপুরের উইকেটের অনেকটা বদনাম কমেছে চলতি বিপিএল আসরে। এবার চট্টগ্রামের উইকেট কেমন আচরণ করে তা দেখার পালা। এ নিয়ে অবশ্য আগাম কোন কিছু বলতে চান না ইবাদত। তিনি বলেন, ‘ঢাকা পর্বের প্রথম দিন রাজা (রেজাউর রহমান) ৪ উইকেট পেয়েছিল। সেদিন সবাই বলেছিল উইকেটটা ভালো হলেও রাজা ভালো করেছে। তারপর উইকেট আরও ভালো হয়েছে। আমাদের দল ১৯২ রানও করেছে। ঢাকার উইকেট এবার খুবই ভালো। চট্টগ্রাম তো বরাবরই ভালো। তারপরও ম্যাচ শুরুর পর হয়তো ভালো বলা যাবে। ভালো উইকেটে যদি আমরা ভালো করতে পারি, তাহলে সামনের বিশ্বকাপে সেটা সাহায্য করবে। এমন উইকেটে ভালো করতে হলে আপনার স্কিল থাকতেই হবে। যদি ইয়র্কার করেন তাহলে সেটা একদম পারফেক্ট হতে হবে। যদি স্লোয়ার করেন, তাহলে সেটা অ্যাকুরেট হতে হবে। ’
বিপিএলে আগেও কাজ করেছেন জুলিয়েন উড। গত বিপিএলে সিলেট সানরাইজার্সের পাওয়ার হিটিং কোচ ছিলেন তিনি। এরপর ভারতীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট- আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পাওয়ার হিটিংয়ে বিশেষজ্ঞ হলেও তিনি একজন ব্যাটিং কোচ এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন জুলিয়েন উড। তিনি বলেন, ‘এটা দারুণ। আমি আইপিএলেও কাজ করেছি। পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে আমার পরিচিতি আছে, যেটা দারুণ। এখন এটা পাওয়ার গেম। কিন্তু একই সঙ্গে আমি ব্যাটিং কোচও, পাওয়ার হিটিংয়ে স্পেশালাইজড আমি। গত বছর দারুণ ছিল আমার জন্য। এরপর আইপিএলে কাজ করেছি, অনেক জায়গাও। এটা ভালো।’
এবারের বিপিএলে চট্টগ্রাম দলে আছেন আফিফ হোসেন ধ্রুবর মতো ক্রিকেটার। তাকে ঘিরেই দলটির বড় পরিকল্পনা। যদিও প্রত্যাশিত মানের ব্যাটিং করতে পারছেন না আফিফ। উড অবশ্য এসব নিয়ে চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘‘আফিফ বিগ হিটিংয়ের প্লেয়ার নন। আফিফের বিশেষত্ব হচ্ছে টাইমিং এবং রিদম। গত বছর সিলেটে বিজয়ের (এনামুল হক) সঙ্গে অনেক কাজ করেছিলাম। আফিফের দিকে দেখেন, তারা বড় না (শরীরের দিক থেকে)। তারা রিদম ও টাইমিংয়ের ওপর নির্ভর করে। তারা বল জোরে মারতে পারে, কিন্তু মুভমেন্টে তাদের রিদম ও টাইমিং দরকার হয়। বড় (দীর্ঘকায়) ক্রিকেটাররা মাসল ব্যবহার করে। তারা পারবে না, যদি করতে যায় কাজ হবে না। এটা আসলে বুঝতে পারার ব্যাপার কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়। যখন এটা হবে তাদের, আমি কিছু ট্রেনিং ও ড্রিলও করাচ্ছি। কিন্তু এটা শুধুই অনুশীলনের একটা ধরন। কিন্তু বুঝতে হবে কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়।’